মুনীর চৌধুরী
|বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে ৩
টি।
শহিদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর পূর্ণ নাম আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। তাঁর পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী হলেও জন্ম গ্রহণ করেন তৎকালীন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে, ২৭শে নভেম্বর, ১৯২৫ সালে। কবীর চৌধুরী তাঁর বড় ভাই এবং ফেরদৌসী মজুমদার তাঁর ছোট বোন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেই মুনীর চৌধুরী বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থাতেই এক অঙ্কের নাটক রাজার জন্মদিনে লিখেছিলেন, যা ছাত্র সংসদ মঞ্চস্থ করেছিল।
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যে প্রথম ছাত্রসভা হয়, তাতে তিনি বক্তৃতা করেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। ২৬শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা আহ্বান করতে গিয়ে গ্রেফতার হন ও তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এসময় প্রায় দুই বছর তিনি দিনাজপুর ও ঢাকা জেলে বন্দী জীবনযাপন করেন। বন্দী অবস্থায় ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কারাবন্দীদের অভিনয়ের জন্য লেখেন কবর নামের একাঙ্কিকা। ১৯৫৩ সালে বামপন্থী রণেশ দাশগুপ্ত জেলখানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি উৎযাপনের লক্ষে মুনীর চৌধুরীকে একটি নাটক লেখার অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের ভিত্তিতে তিনি ঐ নাটকটি রচনা করেন। এ নাটকটি তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে খ্যাত এবং এর প্রথম মঞ্চায়ন হয় জেলখানার ভেতরে, যাতে কারাবন্দীরাই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের যে কোন ধরনের সংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৬ সালে রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বাংলা বর্ণমালাকে রোমান বর্ণমালা দিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তিনি এর প্রতিবাদ করেন।
মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কী-বোর্ড উদ্ভাবন করেন, যার নাম মুনীর অপ্টিমা। An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter (1965) শীর্ষক পুস্তিকায় তিনি তাঁর পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন এবং এই নতুন টাইপরাইটার নির্মাণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার পূর্ব জার্মানিতে যান।
মীর মানস (১৯৬৫) প্রবন্ধ সংকলনের জন্য দাউদ পুরস্কার এবং পাক-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে লেখা সাংবাদিকতাসুলভ রচনা-সংকলন রণাঙ্গন (১৯৬৬) ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সহযোগী আল-বদর বাহিনী তাঁর বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে ও সম্ভবত ঐদিনই তাঁকে হত্যা করে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ
নাটকঃ ‘রক্তাক্ত প্রান্তর‘ পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কাহিনী এর মূল উপজীব্য। নাটকটির জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ‘চিঠি’, ‘কবর‘ (২১, ১০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) – নাটকটির পটভূমি হলো ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ‘দণ্ডকারণ্য’, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য।
অনুবাদ নাটকঃ কেউ কিছু বলতে পারে না (১৯৬৯); জর্জ বার্নার্ড শ-র You never can tell-এর বাংলা অনুবাদ।
রূপার কৌটা (১৯৬৯); জন গলজ্ওয়র্দি-র The Silver Box-এর বাংলা অনুবাদ।
মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০); উইলিয়াম শেক্স্পিয়ারের Taming of the Shrew-এর বাংলা অনুবাদ। (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
প্রবন্ধ গ্রন্থঃ মীর মানস, রণাঙ্গন- সৈয়দ শামসুল হক ও রফিকুল ইসলামের সাথে একত্রে, বাংলা গদ্যরীতি।
অন্যান্যঃ An Illustrated Brochure on Bengali Typewriter.