অক্ষয়কুমার দত্ত
|অক্ষয়কুমার দত্ত ( ১৮২০ – ১৮৮৬) ছিলেন ভারতে বিজ্ঞান আলোচনার পথপ্রদর্শক। লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভের কারণে ১৮৪৩ সালে তাঁকে ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী সভার(প্রতিষ্ঠার তারিখ ১৮৩৯ সালে ৬ অক্টোবর ) মুখপত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের পদে মনোনীত করা হয়। তিনি ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছিলেন। এই পত্রিকায় অক্ষয়কুমারের প্রবন্ধ প্রকাশিত হত। প্রবন্ধগুলিতে সমসাময়িক জীবন ও সমাজ সম্পর্কে অক্ষয়কুমারের নির্ভীক মতামত (জমিদারি প্রথা, নীলচাষ, ইত্যাদি সম্পর্কিত মতামত) প্রকাশ পেত। এই সব প্রবন্ধ তিনি পরে বই হিসাবে বার করতেন।
১৮৪০ সালের ১৩ জুন কলকাতায় তত্ত্ববোধিনী সভার উদ্যোগে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্ষয়কুমার দত্ত এ পাঠশালার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনি পড়াতেন ভূগোল ও পদার্থবিদ্যা। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় পাঠ্যগ্রন্থ না থাকায় তিনি এ পাঠশালার শিক্ষার্থীদের জন্য লেখেন ভূগোল (১৮৪১) ও পদার্থবিদ্যা (১৮৫৬) বিষয়ক বই। ভূগোল বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বিজ্ঞানবিষয়ক বই। পদার্থবিদ্যা পরে প্রকাশিত হলেও, এটি বাংলা ভাষায় রচিত বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের প্রথম গ্রন্থ।
অক্ষয়কুমার দত্তের দার্শনিক রচনা ‘বাহ্যবস্ত্তর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’, ব্রিটিশ Phrenologist(চিত্তবৃত্তির বা মানসিক শক্তিনির্ণয়ার্থে করোটির বহির্ভাগের গঠনাদির বিচারক) জর্জ কুম্ব (George Combe, ১৭৮৮-১৮৫৮)-এর The Constitution of man considered in relation to external object (1828) গ্রন্থের ভাব অবলম্বনে ভারতবর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে অক্ষয়কুমার দত্ত এটা লিখেছেন।
তাঁর রচিত চারুপাঠ শিশুপাঠ্য বই হিসেবে একসময় জনপ্রিয় ছিল।
অক্ষয়কুমারের অণুপ্রেরণার উৎস ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৮৪৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরও ১৯জন বন্ধুর সাথে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছ থেকে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন; এরাই ছিলেন প্রথম দীক্ষিত ব্রাহ্ম।
১৮৫১ সালের ২৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মহ্মসমাজে একটি বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, বেদ ঈশ্বরপ্রত্যাদিষ্ট নয়, বিশ্ববেদান্তই প্রকৃত বেদান্ত, অর্থাৎ ‘অখিল সংসারই আমাদের ধর্মশাস্ত্র। বিশুদ্ধ জ্ঞানই আমাদের আচার্য’ (The whole world is our scripture and pure rationalism is our teacher)। এছাড়া সংস্কৃতের পরিবর্তে বাংলা ভাষায় উপাসনা হওয়া উচিত বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন, ১৮৫৩ সালে খিদিরপুরের ব্রাহ্মসমাজ তা গ্রহণও করেছিল। পরে অবশ্য অক্ষয়কুমার দত্ত ঈশ্বর-উপাসনা বা প্রার্থনা বিষয়টিকেই অগ্রাহ্য করেন। তিনি বীজগণিতের সূত্রের মাধ্যমে দেখিয়ে দেন যে, মানুষের বাসনা পূরণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা নিষ্প্রয়োজন।