নেকড়ে অরণ্য

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শওকত ওসমান একাধিক উপন্যাস লিখেছেন। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি উপন্যাস ‘নেকড়ে অরণ্য’ ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘জাহান্নাম হইতে বিদায়’, ‘দুই সৈনিক’ এবং ‘জলাংগী’। ‘নেকড়ে অরণ্য’ উপন্যাসে নেই কোন যুদ্ধের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের অসীম বিরত্বের কথা, কিংবা বিজয়ের উল্লাস। যুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বর্বর সৈন্যদের রিরংসবৃত্তির শিকার কতিপয় বন্দিনী নারীর জীবন-যন্ত্রনার আলেখ্য এ উপন্যাস। উপন্যাসে লেখক একটি গুদামঘরের বর্ণনা দিয়েছেন। টিনে ছাওয়া, সমতল মেঝের বিশাল এক গুদামঘর। একসময় এই ঘরটিই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন রেজা খান, আলী খানদের নারী ধর্ষণের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সে আস্তানায় তানিমা, জায়েদা, সখিনা, যামোদিনী, চাষী বৌ রশিদারা ধর্ষিত হয় কখনো পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের দ্বারা, কখনো সাধারণ সৈনিকের দ্বারা। তাদের চিৎকার, আর্তনাদ, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, বিপর্যস্ততার নির্মোহ রূপটি তুলে আনেন লেখক এ উপন্যাসে। বনের ভেতর নেকড়ের নৃশংসতাও হার মানে যেন ছোট্ট একটুকরো গুদামঘরে। কিন্তু তার পরও থেমে থাকে না প্রতিবাদ। ক্যাপ্টেনের গুলি বুক পেতে নেয় তানিমা। আর আত্মহত্যার মাধ্যমে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় এইসব বীরাঙ্গানারা।

কালের কণ্ঠ থেকে।

Add a Comment