আগুনপাখি
|দেশ ভাগের উপর রচিত উপন্যাস-
হাসান আজিজুল হক এর ‘ আগুনপাখি’তে এক মধ্যবয়সী নারীর দেশভাঙ্গার মতো মর্মস্পর্শি কান্না শুনতে পায়, সারাজীবন যে নারী স্বামীর সংসারে ঘর-গেরস্থালি করেছে, একেএকে সন্তান-সন্ততি জন্ম দিয়েছে, লালন-পালন করেছে, তারও আগে মায়ের মুত্যৃ হলে ছোটভাইকে কোলে-পিঠে করে বড় করেছে, বাপের দ্বিতীয় বিয়েও দেখেছে, গম্ভীর নির্মম বাপের রাশভারী চেহারা দেখে অভ্যস্ত একজন মেয়ে মানুষ কোনদিন এতটুকু প্রতিবাদ করেনি, স্বামীর সংসারে এসেও মুখ বুজে সমস্ত সাংসারিক দায়িত্ব অথবা ঝামেলা কাঁধে টেনে নিয়েছে, সবই তার কপালে লেখন বলে বিশ্বাস করেছে, কোনদিন কোনভাবে স্বামী নামের মানুষটার মুখোমুখি চোখ তুলে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে পারেনি, ছেলে-মেয়েদের বিয়েশাদি দিয়ে নাতি-নাতনির মুখ দেখেছে, দেবর-জাদের ভিন্ন হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে শাশুড়ি মরে যাওয়ার পর, বিষয়-সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে, তারপর একদিন ভারত থেকে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের খবর বাড়িতে আসা কাগজে পড়েছে, গ্রামবাসীর মুখে শোনে এবার ব্রিটিশ লাল সাহেবরা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে, ভারতবর্ষের লোকেরা স্বাধীন হবে কিন্তু সেই ডামাডোলের মধ্যে যখন শোনে দেশটা দু’ভাগ হবে, অর্থাৎ মুসলমানের একটা দেশ আর হিন্দুদের একটা দেশ, তখন বৃদ্ধা নারী মনের ভেতর থেকে মুষড়ে যায়, নিজেকে সে ক্ষমা করতে পারে না, তার সে প্রতিবাদ বিস্ফোরণ হয়ে বেরিয়ে আসে, কি কারণে আমি নিজের দেশ ভিটে মাটি পরিচিত পরিবেশ মাটি-পানি আকাশ-বাতাস ছেড়ে ভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু হয়ে যাব। তার সে প্রতিবাদ এতটাই শক্ত ছিল যে, শেষাবধি মধ্যবয়সী সে নারীকে স্বামী-সন্তান-সন্ততি বা নাতি-নাতনির মায়া ভালবাসা ত্যাগ করে নতুন আরেক দেশে আসতে হয়নি, এভাবেই এক নারী ভেতর দিয়ে দেশাত্ববোধকে চাঙ্গা করেছেন হাসান। উপন্যাসে মানবিক যে ছবি ফুটে উঠেছে তা পাঠক সমাজকে বিস্ময়ে অভিভূত করে।