জ্ঞানদাস
|জ্ঞানদাস ১৬শ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কবি। ষোল শতক পদাবলীর স্বর্ণযুগ। জ্ঞানদাস এই স্বর্ণযুগের কবি। সঙ্গীতজ্ঞ ও নতুন কীর্তন পদ্ধতির উদ্ভাবক হিসেবে তিনি সুনামের অধিকারী ছিলেন। একালে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যেমন নিজেদের লেখার গানে সুর দিয়েছেন, সেকালে জ্ঞানদাসও একই কাজ করেছেন। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে জ্ঞানদাস বাংলা সাহিত্যে প্রথম ব্যক্তি, যিনি গান লিখে সুর দিয়েছেন। কীর্তন গানেও তাঁর দক্ষতা ছিল বলা হয়। কীর্তনের নতুন ঢঙ তিনি তৈরি করেছিলেন। বর্ধমানের কাঁদড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। সম্ভবত গোবিন্দদাস কবিরাজ, বলরাম দাস প্রমুখের সঙ্গে তিনি খেতুরার উৎসবে উপস্থিত ছিলেন। বাঙলা ও ব্রজবুলি কিংবা এ দুয়ের মিশ্র ভাষায় তিনি পদাবলী রচনা করেন। তবে বাংলায় রচিত পদগুলোই অধিক হৃদয়গ্রাহী। চণ্ডীদাস-অনুসারী জ্ঞানদাস ভাষায় ও ভাবে সহজ ও আন্তরিক। মধ্যযুগের বাংলা গীতি কবিতায় আক্ষেপানুরাগ ও রূপানুরাগের পদগুলোতে তাঁর ভক্ত-হৃদয় যথার্থ প্রাণ পেয়েছে। এখানে সঙ্কলিত আক্ষেপানুরাগের পদটিতে তার প্রমাণ মিলবে। জ্ঞানদাস রচিত গ্রন্থ : মাথুর ও মুরলী শিক্ষা।
জ্ঞানদাসের কয়েকটি বিখ্যাত পদ নিম্নরূপ:
- রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর
প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।। - পিয়াস লাগিয়া জলদ সেবিনু, বজর পড়িয়া গেল।
জ্ঞানদাস কহে কানুর পিরীতি, মরণ অধিক শেল ।। - সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু, আনলে পুড়িয়া গেল।
অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে, সকলি গরল ভেল ॥