BCS-Solution

লর্ড ক্লাইভ

রবার্ট ক্লাইভ (সেপ্টেম্বর ২৯, ১৭২৫ – নভেম্বর ২২, ১৭৭৪) ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী। তিনি ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের সূচনা করেন। তার উপাধি ছিল পলাশীর প্রথম ব্যারন। পলাশীর যুদ্ধে তার নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাদল বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদলকে পরাজিত করে। ১৭৬৫ থেকে ১৭৬৭ পর্যন্ত তিনি বাংলার গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের এক নতুন অধ্যায় রচিত হয় পলাশীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আর এই যাত্রার শুরু লর্ড ক্লাইভের হাত ধরে। তার পুরো নাম রবার্ট ক্লাইভ। ইংল্যান্ডের সাধারণ পরিবারের সন্তান ক্লাইভ সামান্য কেরানি হিসেবে ১৭৪৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগ দেন এবং একই বছরে কোম্পানির ব্যবসার কাজে ভারতে আগমন করেন। ভারতে কিছু দিন চাকরির পর তিনি নিজ দেশে ফিরে যান এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন।

দ্বিতীয়বার তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ভারতে আসেন ১৭৫৬ সালে। এই যাত্রায় ভারতে এসেই তিনি ভারতবর্ষ তথা বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারে কূটকৌশল চালাতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করে মীর জাফর এবং তার মিত্ররা। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু এবং মীর জাফরের ক্ষমতাগ্রহণের ঘটনা ঘটলেও প্রকৃতপক্ষে অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। আর উত্থান ঘটে লর্ড ক্লাইভ তথা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের।


১৭৬০ সালে ক্লাইভ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। পরে বক্সার যুদ্ধের পর কোম্পানির কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। তাদের হঠকারিতায় বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ খারাপ হয়। ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ কোম্পানির দুর্নীতি দমন ও স্বার্থ বৃদ্ধির জন্য ক্লাইভকে লর্ড উপাধি দিয়ে তৃতীয় বারের মত বাংলায় প্রেরণ করে। এরপর তিনি অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার সাথে ও দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে এলাহাবাদের চুক্তি করে, দেওয়ানি লাভ করেন ও ভারতীয় উপমহাদেশে কোম্পানির শাসনের ভিত পাকাপোক্ত করে যান।


পলাশীর যুদ্ধের ১০ বছর পর ১৭৬৭ সালে ক্লাইভ ইংল্যান্ড ফিরে যান। কিন্তু ভারতে রেখে যান ঘুষ, দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র, দুর্বৃত্তায়ন আর অপরাজনীতির এক জঘন্য ইতিহাস। তার দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে ১৭৭২ সালে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট তার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করতে বাধ্য হয়। এতে একে একে তার দুর্নীতির তথ্য বেরুতে থাকে। আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে তিনি সব সম্পদের বিনিময়ে তদন্ত বন্ধ তথা তার সম্মান রক্ষার করুণ আর্তনাদ জানান। তবুও চলতে থাকে তদন্ত। এতে অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেলে ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আত্মহত্যার জন্য তিনি নিজের শরীরে ছুরি চালান বা নিজেই নিজের গলায় ছুরি ঢুকিয়ে দেন বলে প্রচলিত আছে। তবে সম্মান রক্ষার্থে কেউ কেউ প্রচার করেন অতিরিক্ত আফিং বা মাদক গ্রহণ অথবা হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়। তবে মরেও বেঁচে আছে লর্ড ক্লাইভ এক ঘৃণিত বিদেশি প্রভুর আদলে।

Exit mobile version