BCS-Solution

ওঙ্কার

বুক রিভিউ ওঙ্কার-আহমেদ ছফা
Sujon Shahin Rana
——————
সলিমুল্লাহ খান বলেছিল, ওঙ্কারের মধ্য দিয়ে আহমদ ছফা, আহমদ ছফা হয়ে উঠেছিল। মনে হয়না ওতটা ভুল বলেছে। ছোট্ট একটা উপন্যাস মগজে রীতিমত ঝড় তুলে। মাঝেমধ্যে আবিষ্কার করি নিজেরে গল্পকথকের চরিত্রে। আহমদ ছফা শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে এত্ত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন, রীতিমত মগজ কাঁপিয়ে দেয়। যা উত্তাপটা এখনো তাজা শিরা উপশিরায়।

বইটি সম্পর্কে আবুল ফজল বলেছেন-
“এগ্রন্থটি পাঠ করলে যে-কোন সহৃদয় পাঠকই মোহিত হবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রচন্ড আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে এরচাইতে উৎকৃষ্ট কিছু কোথাও লিখিত হয়েছে এমন আমার জানা নেই।”

পুস্তক সম্পাদক নুরুল আনোয়ার বলেছেন-
আহমেদ ছফাকে এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,বাংলা-সাহিত্যে কোন উপন্যাসটিকে ক্লাসিক উপন্যাস হিসেবে মনে করেন। তিনি কোন রকম ভূমিকা না করে জবাব দিয়েছিলেন,আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’।

প্রেক্ষাপটঃ
১৯৭৫ সালে বাংলা উপন্যাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন ঘটে,সেই সংযোজনই আহমেদ ছফার উপন্যাস “ওঙ্কার”। উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে একটা সহজ-সরল পরিবারের পারিবারিক ঘটনার মধ্য দিয়ে,কিন্তু লেখক ‘৬৯ এর অভ্যুত্থানের ঘটনাবলী বিস্তৃত করে পাঠকের মনে সেই সময়ের অগ্নিবীজ ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

সারসংক্ষেপঃ
উপন্যাসটি বর্ণিত হয়েছে উত্তম পুরুষের ভঙ্গিতে। নায়ক মধ্যবিত্ত-তালুকদার পরিবারের ছেলে যার বাবার সামাজিক মর্যাদা কমে গেলেও পারিবারিক জৌলুস অক্ষুণ্ন রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে।
এই পর্যায়ে মোক্তার নামের প্রতিবেশীর সাথে মামলায় জড়ালে সব হারিয়ে তালুকদার সাহেব নিঃস্ব হয়ে পড়েন এবং এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে মোক্তার নিজেই দফারফা করে তার বোবা মেয়ের বিয়ে নায়কের সাথে দিয়ে। শ্বশুড়ের ক্ষমতাবলে নায়ক বাড়ি এবং চাকুরী লাভ করে। বোনকে গান শিখানোর চেষ্টায় সে একদিন দেখে তার মুক পত্নীর গান গাওয়ার আকুতি,তাতে ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। এতো কিছুর মধ্যে ‘৬৯ এর আন্দোলন নাড়া দেয়। সেও যেন মিছিলে শামিল হতে চায়।

উপন্যাসিকার শেষে এসে পাঠক দেখতে পায় যে,নায়ক বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া মিছিলে মানুষের বুক ফাটা চিৎকারকে নবজন্মের আকুতি হিসেবে তুলনা করেছে। নায়কের মনে হয় বাংলাদেশের আকাশ,বাতাস,নদী,সমুদ্র,নর-নারীর হৃদয় কাঁপছে। হঠাৎ সে শুনতে পায় তার বোবা বউ জানলা সমান লাফিয়ে ‘বাঙলা’ অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করল। তার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসা রক্ত দেখে নায়ক ভাবতে বাধ্য হয়-“কোন রক্ত বেশি লাল। শহীদ আসাদের-না আমার বোবা বউয়ের?”

Exit mobile version