সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা
|বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত। সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সরাসরি সামরিক সহায়তা প্রদান না করলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক সমর্থন এবং জাতিসংঘে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন ভারতের জন্য একটি বড় সুবিধা ছিল, যা মুক্তিযুদ্ধের সফলতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা
১. কূটনৈতিক সমর্থন ও সহায়তা:
সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং এই আন্দোলনকে ন্যায়সঙ্গত বলে সমর্থন জানায়। তারা পাকিস্তানের অত্যাচার এবং গণহত্যার নিন্দা করে এবং বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে আরও দৃঢ় করে তোলে।
২. ভারতের প্রতি সমর্থন:
মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং ভারতকে কৌশলগতভাবে সমর্থন করে। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি “মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি” স্বাক্ষর করে, যা ভারতের নিরাপত্তা ও সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করে। এই চুক্তির ফলে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে সক্ষম হয় এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
৩. জাতিসংঘে ভেটো প্রদান:
যুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘে আবেদন জানায় এবং তাদের মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানায়। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বারবার এই প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধে ভেটো দেয়। এর ফলে, পাকিস্তান জাতিসংঘে সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪. মিত্রবাহিনীর কৌশলগত সহযোগিতা:
যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করেনি, তবে তারা ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীকে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সহায়তা প্রদান করে। সোভিয়েত নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সামরিক হুমকির মোকাবিলায় অংশ নেয়। এতে ভারত ও বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম হয়।
৫. বিশ্ব জনমত গঠন ও সমর্থন আদায়ে সহায়তা:
সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। তারা গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য প্রকাশ করে এবং পাকিস্তানের নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের সমালোচনা করে।
মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার ফলাফল
সোভিয়েত ইউনিয়নের কৌশলগত ও কূটনৈতিক সহায়তার ফলে মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমর্থন পায় এবং পাকিস্তানের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তার মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কার্যকরভাবে অবস্থান নিতে সক্ষম হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ত্বরান্বিত হয়।
বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
- মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি, ১৯৭১: ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এই চুক্তির গুরুত্ব।
- জাতিসংঘে ভেটো: পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর প্রভাব।
- সামরিক সহযোগিতা: সোভিয়েত ইউনিয়নের কৌশলগত সামরিক অবস্থান এবং ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনী মোতায়েন।
- বিশ্ব জনমত গঠন: মুক্তিযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচারণা কার্যক্রম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য শুধু সমর্থনই নয়, বরং তা ছিল এক কৌশলগত সহায়তা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায় এবং দেশটির স্বাধীনতা অর্জনের জটিল পটভূমি সম্পর্কে অনুধাবন করা যায়।