ভারতের ভূমিকা ও অবদান

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে ভারত কূটনৈতিক, সামরিক ও মানবিক বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ায়। ভারতের এই সহায়তা বাংলাদেশকে দ্রুত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

ভারতের ভূমিকা ও অবদান

১. মানবিক সহায়তা:

মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার কারণে প্রচুর বাঙালি শরণার্থী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, এবং মেঘালয়সহ বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এই শরণার্থীদের খাদ্য, বাসস্থান এবং চিকিৎসা সরবরাহ করে, যা একটি বিশাল মানবিক সহায়তা ছিল।

২. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা:

ভারত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক প্রচারণা চালায়। ভারত গণহত্যার চিত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে বিশ্ব জনমত গঠনের চেষ্টা করে। এতে বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি পাকিস্তানের কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।

৩. মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ:

ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে। ভারতে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল, যেখানে গেরিলা যুদ্ধসহ বিভিন্ন সামরিক কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষ করে তোলা হয়। এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেলাঘর, ত্রিপুরা, এবং অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকা।

৪. মিত্রবাহিনী গঠন ও সরাসরি সামরিক সহায়তা:

ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে, ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে মিত্রবাহিনী গঠন করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিনটি শাখা – স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ শুরু করে। মিত্রবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর একযোগে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে অংশগ্রহণ করে এবং দ্রুত ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়, যা শত্রু বাহিনীকে দ্রুত আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।

৫. কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান:

৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় পদক্ষেপ ছিল। ভারতের এই স্বীকৃতি অন্যান্য দেশগুলোকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করে।

৬. জাতিসংঘে ভূমিকা:

যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে যায়। পাকিস্তানের মিত্ররা এই প্রস্তাব সমর্থন করে। তবে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষে ভেটো দেয়। ভারত জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এবং বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে উৎসাহিত করে।

ভারতের অবদানের ফলাফল

ভারতের এই বহুমুখী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতের সমর্থন শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ব্যাপক সমর্থন আদায়ে সহায়ক হয়। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয় এবং বাংলাদেশের জনগণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

  • ভারতের সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং মিত্রবাহিনী গঠন
  • ১ কোটি শরণার্থীর সহায়তায় ভারতের মানবিক উদ্যোগ
  • জাতিসংঘে ভারতের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
  • ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে ভারতের স্বীকৃতি এবং এর গুরুত্ব
  • মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র সরবরাহ

ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত জানার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এই বিষয়ক প্রশ্নে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া সহজ হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়।

4o

Add a Comment