লিখিত পরীক্ষার শেষ সময়ে যা করতে পারেন

* কোন প্রশ্নে কত সময় দেব, সেটা প্রশ্নের গুরুত্ব এবং সময়বণ্টন অনুযায়ী ঠিক করে ফেলতাম।

* কে কী পড়েছে, সে খবর কিছুতেই নিতাম না। এ সময়ে মনমেজাজ খারাপ করার তো কোনো মানেই হয় না।
* যা যা পড়েছি, তার তেমন কিছুই মনে থাকবে না, এটা মেনে নিতাম।

* পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরই ওই মুহূর্তে মাথায় যা আসে তা-ই, কিংবা মাথায় কিছু না এলেও জোর করে এনে, লিখে দিয়ে আসতে হয়। তাই এত দিন যত কিছু পড়েছি, সেসব কিছুতে খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম, যাতে পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্ন একেবারে আনকোরা মনে না হয়!

* পেনসিল, কলম, রাবার, চৌকোনা স্কেল, ক্যালকুলেটর এসব গুছিয়ে রাখতাম। পরীক্ষার হলে কয়েকটা ‘চালু কলম’ নেওয়া ভালো। (আমি মূল খাতাটির পৃষ্ঠাগুলোতে চারদিকে মার্জিন করে, অতিরিক্ত পৃষ্ঠাগুলোর চারদিকে ভাঁজ করে দিয়েছিলাম।)

* গড়ে প্রতি তিন-পাঁচ মিনিটে এক পৃষ্ঠা লিখে, পরীক্ষার হলে সবার আগে আমিই ‘লুজ শিট’ নেব, এ ব্যাপারটা মাথায় রাখতাম। লিখিত পরীক্ষা নিঃসন্দেহে ছোটবেলার ‘যত বেশি সম্ভব তত বেশি’ লেখার পরীক্ষা।

* বাসা থেকে বের হওয়া, ফেসবুকে ঘন ঘন লগইন করা, কোচিংয়ে যাওয়া, অনাবশ্যক ফোনে গল্প করা, এসব মাথাতেও আনতাম না।

* লিখিত পরীক্ষা সুস্থ শরীরে মাথা ঠিক রেখে তিন-চার ঘণ্টা না থেমে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে একনাগাড়ে উত্তর লেখার পরীক্ষা। তাই, পরীক্ষার আগের রাতে অবশ্যই খুব ভালো একটা ঘুম দরকার।

* প্রস্তুতি ভালো কিংবা খারাপ যা-ই হোক না কেন, পরীক্ষায় ভালো করার একটা সিক্রেট হলো, পরীক্ষার হলে ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট!’ এ ভাবটা যতক্ষণ পরীক্ষা দিচ্ছি ততক্ষণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ধরে রাখা। এটা সত্যিই ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আমার চেয়ে কেউ বেশি পারে, কিংবা আমার চেয়ে কেউ ভালো লিখছে, এটা মাথায় রাখলে আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতির চেয়ে পরীক্ষার হলে আত্মবিশ্বাসটাই বেশি কাজে লাগে।

* আমার অভিধানে ‘আনকমন প্রশ্ন’ বলে কিছু নেই। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না এলে বানিয়ে লিখে দিয়ে আসতে হবে, বানাতে না পারলে কল্পনায় আনতে হবে, কল্পনায় না এলে জোর করে কল্পনা করতে হবে। আমি উত্তর করছি না, এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে।

* আমি বিশ্বাস করি, ভালো প্রস্তুতি থাকলেই যেমনি ভালো পরীক্ষা দেওয়া যায় না, তেমনি খারাপ প্রস্তুতি থাকলেই খারাপ পরীক্ষা দেওয়া যায় না। ফলাফল সব সময়ই চূড়ান্ত ফলাফল বের হওয়ার পর, আগে নয়। এর আগ পর্যন্ত আমি কিছুতেই কারও চেয়ে কোনো অংশেই কম নই।

* আগে কী পড়েনি যা পড়া উচিত ছিল, সেটা নিয়ে মাথা খারাপ না করে, কী কী পড়েছি, সেটা নিয়ে ভাবতাম বেশি।

* লিখিত পরীক্ষায় এত দ্রুত আর এত বেশি লিখতে হয় যে মাঝেমধ্যে লিখতে লিখতে মনে হয় যেন হাতের আঙুলের জয়েন্টগুলো খুলে পড়ে যাবে। তবুও লিখেছি; ননস্টপ, আক্ষরিক অর্থেই। ওই তিন-চার ঘণ্টাতেই ছিল আমার জীবিকার ছক গাঁথা। বিসিএস পরীক্ষা মূলত লিখিত পরীক্ষায় বেশি মার্কস পাওয়ার পরীক্ষা।

* সংবিধানের সব ধারা আমার মুখস্থ ছিল না, অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত অত ভালো জানতাম না, মুখস্থবিদ্যা ছিল না, তবুও আমি চাকরি পেয়েছি। তবে আপনি পাবেন না কেন?

* এ সময়ে কিছু অভিনব প্রশ্নসমৃদ্ধ ‘টাচ অ্যান্ড পাস’ টাইপের সাজেশন পাওয়া যায়। এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতাম, নিজের সাজেশনসের ওপর নির্ভর করাই ভালো।

* যেসব প্রশ্ন বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেসব প্রশ্ন আমি বরাবরই এড়িয়ে গেছি। সবাই সবকিছু পারে না, সবকিছু সবার জন্য নয়।

* টেনশন থাকবেই। পরীক্ষা দিয়ে টেনশন করাটাও একটা সাধারণ ভদ্রতা। আমাকে না হয় কয়েকজন মানুষের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে হয়, কিন্তু একজন সৌম্য সরকারকে তো অন্তত ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ মাথায় রেখে খেলতে হয়। ও পারলে আমি কেন পারব না?

* বেশি পড়া হলে ভালো পরীক্ষা দেওয়া যায়, এমনটা নাও হতে পারে। ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার চেয়ে ভালো পরীক্ষা দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

* হাতের লেখা সুন্দর হোক বা না হোক, হাতের লেখা যাতে পড়া যায়। নীল কালিতে কোটেশন আর রেফারেন্স দিয়ে সবকিছু উত্তর করে হাতের লেখা সুন্দর রাখাটা রীতিমতো দুঃসাধ্য!

* কোন প্রশ্নের উত্তর কত পৃষ্ঠা লিখতে হবে, সেটা নির্ভর করে প্রশ্নটির নম্বর, গুরুত্ব, সময় আর আপনার লেখার দ্রুততার ওপর। সময় সবার জন্যই তো সমান, এটার সঠিক ব্যবস্থাপনাই আসল কথা।
‘এবার যা হয় হোক, পরেরবার একদম ফাটায়ে পরীক্ষা দেব’ এটা প্রতিবার পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই আপনার মনে হতে থাকবে। এর আগে প্রথম আলোতে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ছয়টি বিষয়ভিত্তিক লেখা এবং ৩৫টি পয়েন্টে ৩৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার প্রস্তুতিকৌশল নিয়ে আমার লেখা এসেছিল। প্রয়োজনে সেগুলো পড়ে নিন। গুডলাক!

লেখক: ৩০ তম বিসিএেস প্রথম।

Add a Comment