উত্তরটা ইংরেজিতেই দিন ***

সুশান্ত পাল, ২৯ জানুয়ারি ২০১৬- Prothom Alo


৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেছেন, তাঁরা সত্যিই অনেক যোগ্য। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা অন্যবারের চেয়ে কম। যে করেই হোক, এই দারুণ সুযোগটা কাজে লাগাতেই হবে! নিয়মিত প্রার্থনা করুন আর এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর পথের শেষটা যাতে অনেক সুন্দর হয়, আপনার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সে চেষ্টা করে যান। আপনি সফল হবেনই!
বিসিএস ভাইভা পরীক্ষার সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে লিখছি। তবে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো। ভাইভাতে ভালো করার অন্তত ১০০টি টেকনিক আছে, যেগুলোর একটাও কাজ করে না। এটা মাথায় রেখে আমার পরামর্শগুলো পড়বেন।

০১. ভাইভাতে কোনো প্রশ্ন ইংরেজিতে করলে উত্তরটাও ইংরেজিতেই দিতে হবে। অনেক সময়ই বাংলায় প্রশ্ন করে ইংরেজিতে উত্তর দিতে বলা হয়। কোনোভাবেই বাংলায় উত্তর করার জন্য অনুমতি চাইবেন না। কাজ চালানোর মতো ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এই সময়ে যা যা করতে পারেন:

ক. সাবটাইটেল অন করে আমেরিকান উচ্চারণের ইংরেজি মুভি দেখতে পারেন।
খ. বিটিভির রাত ১০টার সংবাদ, আল-জাজিরার সংবাদ, টেড টকস্, ইউটিউব থেকে ইংরেজিতে কথা বলার ধরন খেয়াল করতে পারেন।
গ. মোটামুটি আপনার সমপর্যায়ের কোনো বন্ধুর সঙ্গে প্রতিদিন ৫ মিনিট ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন।
ঘ. মোবাইলের ভয়েস রেকর্ডারটা অন করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরেজিতে কথা বলা প্র্যাকটিস করতে পারেন। পরে শুনে দেখলে নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনার কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে।
ঙ. আপনি ধরেই নেবেন, আপনি ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। এরপর একজন ইংরেজ হয়ে ইংরেজিতে কথা বলার অভিনয় করুন।
চ. সব সময়ই আপনার আশপাশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইংরেজিতে ভাবুন এবং মাঝে মাঝে সেসব নিয়ে নিজের মনেই বলতে থাকুন। নিজের সঙ্গে নিজেই ইংরেজিতে কথা বলুন।
ছ. ইংরেজিতে কথা বলার সময় আঞ্চলিকতা পরিহার করার চেষ্টা করুন।
জ. আস্তে-ধীরে ইংরেজিতে কথা বলবেন। তাড়াহুড়া করলে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
ঝ. কোনো একটা থিমের ওপর কয়েকজন মিলে ইংরেজিতে গল্প করতে পারেন। ঞ. কখনোই আপনার ভুলগুলো নিয়ে মন খারাপ করবেন না। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারেও চাকরি পেতে ইংরেজিতে কথা বলার অসাধারণ দক্ষতা থাকতে হয় না।

০২. আপনার ফার্স্ট ও সেকেন্ড ক্যাডার চয়েজ, আপনার সাবজেক্ট, সাম্প্রতিক নানান ইস্যু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ, আপনার এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও সেখানকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, আপনি কেন সিভিল সার্ভিসে আসতে চাইছেন ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি একটা আইডিয়া রাখুন। নিয়মিত পেপার, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট নিউজ, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ইত্যাদিতে চোখ রাখুন।

০৩. ভাইভাতে ওপেন-এন্ডেড প্রশ্নে বেশি মার্কস বরাদ্দ থাকে। এই ধরনের প্রশ্নগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমনটা হলো: Introduce yourself। এ রকম আরও অনেক প্রশ্ন ভাইভা গাইড কিংবা ইন্টারনেটে পাবেন। এগুলোর উত্তর অন্য ১০ জন যেভাবে দেয়, সেভাবে না দিয়ে একটু ভিন্নভাবে দেওয়ার চেষ্টা করুন।

০৪. ঢোকার সময় আর বের হয়ে যাওয়ার সময় খুবই মার্জিতভাবে সালাম/নমস্কার/আদাব দিন। আপনি ঢোকার সময় যে ইম্প্রেশনটা তৈরি করবেন, সেটাই আপনার ভাইভার প্রশ্ন অনেকটাই নির্ধারণ করে দেবে।

০৫. নিজেকে উৎসাহী শ্রোতা হিসেবে উপস্থাপন করুন। কোনো বিষয় নিয়েই তর্কে জড়াবেন না।

০৬. কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটি বিনীতভাবে বলুন। একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাঝখানে অন্য একজন প্রশ্ন করলে প্রথম জনের কাছ থেকে অনুমতি নিন।

০৭. আপনার নিজের সম্পর্কে, আপনার পরিবার, আগের চাকরি, বাংলাদেশের সমস্যাসহ নানান বিষয় নিয়ে ইতিবাচকভাবে বলা শিখুন।

০৮. নার্ভাসনেস নিয়ে অতটা ভাববেন না। এটা পরিস্থিতিই ঠিক করে দেবে। চাকরির পরীক্ষা নিয়ে নার্ভাস থাকাটাও একটা ভদ্রতা।

০৯. আই কন্টাক্ট ঠিক রাখুন। দৃষ্টিকটুভাবে চোখ, ঘাড়, হাত নাচাবেন না।

১০. আপনার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে আপনার ফার্স্ট চয়েজের একটা সম্পর্ক নিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।

১১. আপনার প্রতিষ্ঠান এবং রেজাল্ট যা-ই হোক না কেন, আপনি কোনো চাকরির জন্য অপরিহার্য নন, এটা মাথায় রেখে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নিন।

১২. কোনো প্রশ্নের উত্তরে কনফিউশন থাকলে সেটি যতটুকু জানেন, ততটুকুই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলবেন। তবে একেবারেই কোনো ধারণা না থাকলে উত্তর না করাই ভালো।

১৩. আপনার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট আপনার ভাইভার মার্কসে কোনো প্রভাব ফেলবে না। রেজাল্ট অতটা ভালো না হলে ওটার পক্ষে মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য একটা কারণ তৈরি করে রাখবেন।

১৪. রাজনৈতিক বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেলেই ভালো।

১৫. আপনার ভাইভার পোশাক হবে একেবারেই ফরমাল ও অফিসারসুলভ। ধর্মীয় পোশাকে কোনো বাধা নেই।

১৬. ভাইভা বোর্ডে কোনো অবস্থাতেই কোনো বিষয় নিয়েই মেজাজ গরম করা যাবে না।

১৭. টেকনিক্যাল ক্যাডারের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের সাবজেক্টের বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে যাবেন।

১৮. একটু কনফিউজিং বানানের কিছু কমন শব্দ, সাধারণ কিছু অনুবাদ, জনপ্রিয় বই, ভূগোল ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে যাবেন।

১৯. আপনার প্রিয় শখ যা-ই বলুন না কেন, সেটি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন।
২০. কথা বলার সময় যদি হঠাৎ তোতলাতে থাকেন কিংবা খেই হারিয়ে ফেলেন, তাহলে একটু থেমে এরপর আবার উত্তর করা শুরু করবেন।

ভাইভা নিয়ে আরও কিছু কথা বলব পরের লেখায়। ভালো থাকবেন।

Add a Comment