BCS ভাইভার নানা পরামর্শ

বেশ কিছুদিন আগে ৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সাধারণ বিষয়গুলোর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সাধারণত যাঁরা পরীক্ষা দেন, তাঁরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন পরীক্ষা কেমন হলো। দু-চারটি দুর্ঘটনা ছাড়া মোটামুটি অনুমিত বিষয় মিলে যায়। তাই যাঁরা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের আস্তে আস্তে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ভাবা দরকার এবং প্রস্তুতি শুরু করা দরকার। কারণ, লিখিত ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ভাইভা শুরু হয়ে যায়। তখন তাড়াহুড়ো করে আর ভালো প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে আত্মবিশ্বাস কম থাকে এবং জানা জিনিসও ভুল করে আসে। মনে রাখবেন, বিসিএস ভাইভা ভালো করতে হলে প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আর আত্মবিশ্বাস এমনি এমনি বাড়ে না। এর জন্য ভাইভার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা ও পড়াশোনা করা প্রয়োজন। নিচে ভাইভা নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো।
ক) ৩৪তম ও ৩৫তম-এর আলোকে বলা যায়, ভাইভা অনুষ্ঠানের ক্রম হলো প্রথমে সাধারণ ক্যাডার, তারপর বোথ ক্যাডার এবং শেষে কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডার।

খ) ২০০ নম্বরের মধ্যে যদি আপনি শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর, মানে ১০০ পান তবে পাস করেছেন। এতে ক্যাডার আসবে কি না বলা যায় না। তবে নন-ক্যাডার লিস্টে নাম থাকবে আরকি!

গ) সাধারণত নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টায় ভাইভা শুরু হয়। আপনাকে ৩০ মিনিট আগে যেতে হবে। নিচতলার একটা বড় কক্ষে সবাইকে জড়ো করা হয়। তারপর পিয়ন এসে নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ধরে কাঙ্ক্ষিত বোর্ডে নিয়ে যাবে। এখানে মনে রাখা দরকার, বোর্ড সিলেকশন করা হয় এলোপাতাড়ি এবং ওই দিন সকালেই। সুতরাং কোনো ধরনের অসমতা হওয়ার সুযোগ নেই।

ঘ) বোর্ডের ধরন দুটি। একটি প্রেসিডেনশিয়াল এবং অন্যটি সাধারণ ভাইভা বোর্ড। প্রেসিডেনশিয়াল বোর্ডে পিএসসির সব সদস্য থাকেন। এটা প্রথম কয়েক দিন চলে। আর সাধারণ বোর্ডে পিএসসির প্রত্যেক সদস্য চেয়ারম্যান হয় ও দুজন বাইরের এক্সপার্ট থাকেন। অর্থাৎ তিনজন মিলে বোর্ড গঠিত হয়।

ঙ) কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের ভাইভার সময় সাধারণত সাবজেক্ট এক্সপার্ট থাকেন। তাই প্রস্তুতি ভালো নিতে হবে।

চ) সাতাশতম বিসিএস থেকে থেকে বোর্ডের সামনে আপনার লিখিত পরীক্ষার নম্বর থাকে না। অর্থাৎ আপনাকে মূল্যায়ন করা হবে শুধু ২০০ নম্বরের ওপর। আগে কী করেছেন এবং ভবিষ্যতে কী করবেন, তা বিবেচ্য বিষয় না।

ছ) আপনি বোর্ড থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্দিষ্ট স্থানে চেয়ারম্যান সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নম্বর দিয়ে দেন।

জ) পোশাক ছেলেরা স্যুট টাইসহ ফরমাল পরবেন। সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট উত্তম। মেয়েরা মানানসই শাড়ি পরবেন। পরীক্ষার স্থানে এসি আছে, তাই গরম ও পোশাকের মধ্যে সংঘর্ষ হবে না।

ঝ) কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকবেন। সাধারণ আদর্শগুলো মেনে চলবেন। যেমন অনুমতি নেওয়া, সালাম দেওয়া, নম্রভাবে হাঁটা ইত্যাদি। সহজ কাজ কিন্তু অনেকেই ভুলে যায়।

ঞ) বোর্ডে যে ধর্মের লোকই থাকুন, মুসলিম প্রার্থী সালাম দেবেন, হিন্দু প্রার্থী নমস্কার দেবেন এবং অন্য ধর্মের প্রার্থীরা নিজের রীতি মেনে বলবেন।

ট) সাধারণত গড়ে ২০ মিনিটের মতো আপনাকে বোর্ডের সামনে থাকতে হতে পারে। আমার জানামতে, ৩৪তমে একজনকে ৪৫ মিনিট রাখা হয়েছিল। তবে এটা ব্যতিক্রম। ভয়ের কিছু নেই।

ঠ) বোর্ডের চেয়ারম্যান বা সদস্য নারী হলেও স্যার সম্বোধন করবেন। আর পুরুষদের তো স্যারই বলবেন।

ড) আপনার গলার স্বর কখনো অধিক উচ্চ বা অধিক নিম্ন হবে না। আদর্শ মান বজায় রেখে কথা বলবেন। ৩৫তমে এক প্রার্থী জোরে সালাম দেওয়ায় বোর্ড রেগে গিয়েছিল। আরেকটা বিষয়, কথা বলার গতি খুব দ্রুত বা ধীর যেন না হয়। এতে বিরক্ত হয় অনেকে। কথার মাঝখানে এ্যাঁ, হুম্, উহ্ উচ্চারণ করা যাবে না।

ঢ) বাংলা প্রশ্ন বাংলায় উত্তর, ইংরেজি প্রশ্ন ইংরেজিতে উত্তর এবং ইংরেজি-বাংলা মিশ্রিত প্রশ্নের উত্তর মিশিয়েই দেবেন।

ণ) যদি বাংলায় কথা বলেন, কোনোভাবেই ইংরেজি শব্দ টেনে আনবেন না। এতে সমস্যা হতে পারে। তবে টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করতে পারেন।

ত) অনেক সময় ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর বাংলায় দিতে চাইলে অনুমতি নিয়ে নেবেন। বোর্ড অনুমতি দিলেই কেবল বলবেন। অন্যথায় নয়। তবে অনেক বোর্ড বাংলা বলার অনুমতি দেয় না।

থ) উত্তর খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করুন। পারলে পয়েন্ট আকারে বলবেন। একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, যা জিজ্ঞাসা করল, তার বেশি বলতে যাবেন না। এতে দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়। ১. আপনি প্রশ্ন বোঝেননি। ২. বেশি পাণ্ডিত্য দেখাচ্ছেন। ভেবে দেখুন, কোনোটাই আপনার অনুকূলে নয়। তাই সাবধান।

দ) একটা কথা মনে রাখবেন, বোর্ড আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে না। আপনি বোর্ডকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। কীভাবে? ধরুন, আপনার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তাহলে আপনাকে লালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে বেশি।

ধ) বোর্ড যদি কারও সঙ্গে খুব বেশি আন্তরিকতা প্রকাশ করে, তবে ধরে নেওয়া হয় ইতিবাচক একটা নম্বর আসতে পারে। ‘তুমি’ সম্বোধনও অনেক সময় ইতিবাচক। তবে এটি কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়।

ন) কথা বলার সময় হাত নাড়াবেন না এবং পা ঝাঁকাবেন না। মাথা প্রয়োজন অনুযায়ী মুভ করবেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসতে যাবেন না।

প) ভাইভায় ফেল বা কম নম্বর পাওয়ার প্রধান কারণ হলো: ১. বেয়াদবি করা; ২. বেশি জানার ভাব করা; ৩. নার্ভাস থাকা; ৪. অসতর্ক আচরণ করা; ৫. উচ্চারণে আঞ্চলিকতা থাকা; ৬. আই কন্ট্রাক্ট না থাকা; ৭. ব্যর্থতা স্বীকার না করা; ৮. সন্তোষজনক উত্তর কম দেওয়া ইত্যাদি।

এই বিষয়গুলো মাথায় থাকলে ভাইভা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। পরবর্তী পর্বে আমি ভাইভায় কী পড়বেন, কোথা থেকে পড়বেন, কোন বই ও গাইড পড়বেন, উত্তর দেওয়ার কৌশল, ইংরেজির গুরুত্ব এবং শেখার কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করব। সবার জন্য শুভকামনা।

Add a Comment