OIC

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল ছয়দিনের যুদ্ধের পর ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট ইসরাইল, জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করে। এর ফলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় ২২-২৫ সেপ্টেম্বর মরক্কো রাবাতে ২৪ টি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনের শেষ দিনে অর্থাৎ ২৫ আগস্ট ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওআইসির সরকারি ভাষা আরবি, ইংরেজি, এবং ফরাসি। মোট তিনটি ভাষা। (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
এই সংস্থা মূলত মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ওআইসি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা। ওআইসির একটি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি দল রয়েছে। এককথায় বলা যায় ওআইসি মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কন্ঠস্বর।

সচিবালয় ও মহাসচিব

OIC এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন মালেশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুল রহমান। সংস্থাটির বর্তমান মহাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন। ইউসেফ আল-ওথাইমিন সৌদি আরবের একজন রাজনীতিবিদ। ওথাইমিন ২০১৬ সালে আইয়াদ বিন আমিন মাদানির স্থলাভিষিক্ত হন। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা মরক্কোর রাবাতে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর সদর দপ্তর সৌদি আরবের জেদ্দায়। (২২, ১০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) জেদ্দাতেই ১৯৭০ সালে সংস্থাটির সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণ প্রথম বৈঠকে মিলিত হয়।

OIC এর সদস্য রাষ্ট্র

প্রিতিষ্ঠাকলীন ওআইসি-এর সদস্য ছিল ২৫টি মুসলিম রাষ্ট্র। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৫৭টি। সর্বশেষ সদস্য আইভরি কোস্ট- ২০০১ সালে যোগ দেয়। বাংলাদেশ ২২ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি এর দ্বিতীয় সম্মেলনে ৩২ তম সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ সংস্থাটি সদস্যপদ লাভ করে।

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রায় সবগুলোতেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটিদেশ যেমন উগান্ডা (২৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) – এখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় কিন্তু OIC এর সদস্য। উগান্ডার ২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুসারে মোট জনসংখ্যার ১৪% মুসলিম। আবার অনেক দেশ আছে যেগুলোতে তুলনামূলক অনেক মুসলান বসবাস করলেও OIC এর সদস্য নয়। যেমন- ভারত ও ইথিওপিয়া। মুসলিম বসবাসকারী আরও কিছু দেশ আছে যেগুলো সংস্থাটির পর্যবেক্ষক হিসাবে আছে যেমন- বসনিয়া, রাশিয়া, থাইল্যান্ড।

শীর্ষ সম্মেলন

প্রতি তিন বছর পর পর শীর্ষ সম্মেলন করার নিয়ম থাকলেও, তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। প্রথম শীর্ষ সম্মেলোন হয় মরক্কোর রাবাতে ২২-২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯। দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের লাহরে ১৯৭৪ সালে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যভুক্ত হয়। পরবর্তী সম্মেলন গাম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে।

২০১১ সালের ২৮ জুন আস্তানা, কাজাখস্তানে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলে প্রতিষ্ঠানটির নাম Organisation of the Islamic Conference পরিবর্তন করে Organization of Islamic Cooperation করা হয়। এই সময়ে ওআইসির লোগোও পরিবর্তন করা হয়।

অঙ্গসংস্থা

  • গাজীপুরে অবস্থিত ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’
  • জেদ্দায় ইসলামী ফিকহ্‌ একাডেমি
  • ইসলামি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মরক্কোর রাবা।
  • ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক(IDB)
  • আন্তর্জাতিক ইসলামী আদালত

বাংলাদেশ ও ইসলামি সম্মেলন সংস্থা

বাংলাদেশ ২২ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪ সালে (২৭, ২২তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) ও আই সি এর দ্বিতীয় সম্মেলনে ৩২ তম সদস্য হিসাবে সদস্যপদ লাভ করে। উল্লেখ যে এ সম্মেল এই সদস্যপদ লাভের মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওআইসির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি সংহতি প্রদর্শনেরমাধ্যমে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে যথাসম্ভব সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। যেমনফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অব্যাহত সমর্থন জানিয়ে আসছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে নিন্দা জানিয়েছে। বসনিয়ায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য সৈন্য পাঠিয়েছে।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতা পেয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশগুলোতে বাংলাদেশের বিশাল জনশক্তি রপ্তানি যা কর্মসংস্থানসহ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবছর বাংলাদেশের বহুসংখ্যক লোক হজ্জ করার জন্য সৌদি আরব যায়। তাছাড়া
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরাতন মসজিদ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ওআইসির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পায়। গাজীপুরে অবস্থিত ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’ ওআইসির আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে।

Add a Comment