BCS-Solution

ADB

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (Asian Development Bank- ADB) বা এডিবি আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে ২২ আগস্ট, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো দ্রুত, বেগবান ও সহজ করাই ব্যাংকটির মূল উদ্দেশ্য।

বিশ্বব্যাংকের প্রায় সমরূপ ধাঁচে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সদস্যভূক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক বুনিয়াদের উপর নির্ভর করে ভোট প্রদানের সীমারেখা নির্ধারিত করা হয়েছে যা বিশ্বব্যাংকের সমস্তরের। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান প্রত্যেকেই মোট শেয়ারের ১৫.৬০৭% শেয়ার নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এছাড়াও, চীন, ভারত যথাক্রমে ৬.৪২৯% এবং ৬.৩১৭% দখল করেছে। এরফলে তারা ২য় এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছে।

বোর্ড অব গভর্নরস্‌ কর্তৃক ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়। তিনি পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ৫ বছর সময়কালের জন্য নিযুক্ত হন। প্রয়োজনে তিনি পুণরায় নির্বাচিত হতে পারেন। সচরাচর এবং সর্বোবৃহৎ মালিকানার অধিকারী বিধায় জাপানীরাই এর প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তাকিহিকো নাকাও। তিনি ২০১৩ সালে হারুহিকো’র স্থলাভিষিক্ত হন। এডিবি’র সদর দফতর ফিলিপাইনে অবস্থিত।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মূলত কিছুসংখ্যক জাপানীদের আগ্রহের প্রেক্ষিতে। তাঁরা ১৯৬২ সালে ব্যাংকের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাইভেট প্ল্যান বা বেসরকারী পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে জাপান সরকার এতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। জাপানীরা অনুভব করেছিল যে, বিশ্বব্যাংক এশিয়ার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে এশিয়া তথা এশীয়দের তেমন কোন উন্নয়ন ঘটবে না। ফলশ্রুতিতে একটি ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গঠনের মাধ্যমে জাপান লাভবান হবে।

অতঃপর ১৯৬৬ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই জাপান ব্যাংকটির শীর্ষস্থানে আসীন হয়। তারা সভাপতির আসন দখল করে। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত পদও করায়ত্ত্ব করে। তন্মধ্যে – প্রশাসনিক বিভাগ অন্যতম।

জাপানের অর্থনৈতিক লাভের প্রেক্ষাপটে এডিবি কাজ করে যায়। এর অধিকাংশ ঋণ সহায়তা কার্যক্রমে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া,দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনকে সম্পৃক্ত করে। কেননা জাপানের সাথে দেশগুলোর ব্যাপক বৈদেশিক লেনদেন পরিচালিত হয়। ১৯৬৭-৭২ সাল পর্যন্ত দেশগুলো এডিবি’র মোট ঋণের ৭৮.৪৮% অর্থ পেয়েছিল।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক একটি আঞ্চলিক ব্যাংক যা ১৯৬৬ সালের ১৯ ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর ফিলিপাইনের ম্যানিলায়। সারা বিশ্ব Asian Development Bank(ADB) এর ৩১ টি মাঠ কার্যালয়(Field Offices) আছে যারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতেছে। এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১ টি, বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬৭ যার ৪৮ টি দেশ এশিয়া মহাদেশের। এখানেও বিশ্ব ব্যাংকের মত সদস্য রাষ্ট্রদের চাঁদার পরিমাণের সাথে ভোটিং ক্ষমতার বণ্টন করা আছে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান শীর্ষস্থানীয়।

পরিচালনা
ADB তে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র থেকে একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয় বোর্ড অব গভর্নেস। বোর্ড অব গভর্নেস নিজেদের মাঝে ১২ জন সদস্য নিয়ে বোর্ড অব ডিরেক্টর গঠন করে। এ ১২ জনের মধ্যে ৮ জন আসে এশিয়া ও প্রশান্ত এলাকা থেকে অপর ৪ জন আসে এর বাইরে থেকে। বোর্ড অব গভর্নেস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। তিনি বোর্ড অব ডিরেক্টরের সভাপতি হিসাবে ব্যাংক পরিচালনা করেন। যেহেতু জাপান ADB এর একটি বড় শেয়ারহোল্ডার তাই প্রথম থেকেই একজন জাপানিজ এর সভাপতি হয়ে আসছেন। বর্তমান সভাপতি জাপানের তাকিহিকো নাকাও।

লক্ষ
এটি একটি উন্নয়নমূলক সংস্থা যার মূল লক্ষ নিরবিচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্বারা অত্র অঞ্চলের দারিদ্র্য দূর করা।
পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা।
আঞ্চলিক সংহতি বৃদ্ধি করা। ও আঞ্চলিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার।
বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রকল্পে বিনিইয়োগ করে বা ঋণ দিয়ে সহায়তা করা।

কার্যক্ষেত্র
শিক্ষাঃ এডিবি-জাপান নামের স্কলারশিপে প্রতিবছর ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়। যারা পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখে।
পরিবেশ
অর্থনৈতিক খাতের উন্নয়ন
সুশাসন নিশ্চিত করা।
সামাজিক উন্নয়নঃ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, নারি ও শিশু।
অবকাঠামো উন্নয়নঃ পরিবহন, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শক্তি,বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন , ও পরিকল্পিত নগরায়ন।
বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়া।
ঋণের অর্থ একেবারে দিয়ে দেওয়া হয় না, কাজের অগ্রগতি হিসাবে আস্তে আস্তে দেওয়া হয়।

সমালোচনা
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ADB এর বৃহৎ দাতা। তাই অনেকে মনে করেন যে তাদের প্রভাবে বেশি।
দূরদর্শী পরিকল্পনার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
খাদ্য সংকটে এর ভূমিকা নিয়ে ও বিতর্ক আছে।
এর অধিকাংশ দাতা গোষ্ঠী তেল রপ্তানির উপর নির্ভর, তাই এক দিকে তেলের দাম বাড়লে যেমন সুবিধা অপর দিকে এতদাঞ্চলের মানুষের জন্য তা অসুবিধা।

আডিবি ও বাংলাদেশ
এখানে বাংলাদেশএর শেয়ার ১.০২৬ তাই বাংলাদেশের ভোটিং ক্ষমতা ও একের কিছু বেশি।

Exit mobile version