যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ

গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ১৫০ BUSD, আর যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করেছে ৫০০ BUSD. এ থেকে এটি স্পষ্ট যে দেশদুটির মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৫০BUSD. ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১৫১ BUSD. বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই উভয়ের ৩৪BUSD পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে। এবং ট্রাম আরও ২০০BUSD এর উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধটা শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। প্রথম দফায় তিনি চীন থেকে লোহা ও এলুমিনিয়াম আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন এরপর তিনি গাড়ির যন্ত্রাংশ, টিভি সেট সহ মোট ১৩০০ চীনা পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করবেন। চীনের বাণিজ্য নীতি নিয়ে আমেরিকার অসন্তোষ অনেকদিনের। চীনের অর্থনীতি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এবং প্রধান পণ্য উৎপাদনে মোটা অংকের সরকারি ভর্তুকি দেওয়ায় তাদের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টেকা সহজ নয়। অধিকাংশ অর্থনীতিবীদ একমত যে বাণিজ্যে যুদ্ধে চীনের ওই বেশি ক্ষতি হতে পারে কারণ তারা মোট রপ্তানির এক-পঞ্চমাংশ পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।

চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মদ, শূকুরের মাংস, ফল, সয়াবিন ও কটনের মতো কৃষি পণ্যের উপর পালটা শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছে। চীন যদি মার্কিন কৃষিপণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে তাহলে ২৭৮৩ টি অঞ্চলের মোট ২১ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে এসব অঞ্চলের ৮২ শতাংশ মানুষ গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন রিপাবলিকান দলের নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধে বিরক্ত হয়ে ওইসব অঞ্চলের ভোটাররা হয় অন্য বাক্সে ভোট দিবেন, অথবা আদৌ ভোট দিতে যাবেন না। বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে রিপাবলিকান নেতাদের অনেকেই ট্রাম্পের ওপর ক্ষিপ্ত।

যদিও বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের এই যুক্তির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইস্পাতের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারকদের দূরে সরিয়ে দিয়ে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তাকে ইতিমধ্যেই হুমকির মুখে ফেলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির একটি সফল আলোচনার শর্ত থেকে কানাডাকে অব্যাহতি দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি না মেনে নিলে কানাডা কার্যকরভাবে হুমকির সম্মুখীন হবে।

একইভাবে ট্রাম্প ইস্পাতের ওপর শুল্ক এমন সময় বাড়িয়েছেন, যখন কিনা ইস্পাতের দাম এমনিতেই ১৩০ শতাংশ বেড়েছে। ট্রাম্প যে কেবল অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তা নয়। তিনি উল্টাপাল্টা কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেরও ক্ষতি করছেন। আর যাঁরা তাঁকে নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে ভালো হওয়ার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্পকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য কোনো অর্থনীতিবিদ না থাকলেও তাঁকে এটা বুঝতে হবে যে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি হলে কী ক্ষতি হয়। এটা একটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতির মতো নয়। চীন থেকে পণ্য আমদানি কমালে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো চাকরির বাজার তৈরি করবে না। তার পরিবর্তে এটা সাধারণ আমেরিকানদের জন্য দাম বাড়িয়ে দেবে এবং বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও অন্য কোনো দেশে চাকরির বাজার তৈরি করবে এবং তারা সেসব পণ্য রপ্তানি করার পদক্ষেপ নেবে, যেগুলো আগে চীন রপ্তানি করেছে।

ট্রাম্প চান চীন তার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমিয়ে ফেলুক। ১০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন তেল বা গ্যাস কেনার মাধ্যমে চীন এটি করতে পারে। তবে চীন যদি অন্য কোথাও থেকে তার কেনা কমাতে পারে বা মার্কিন তেল বা গ্যাসকে অন্য স্থানে বিক্রি করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবেই মূর্খের মতো।

চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮টি রপ্তানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক আরোপের ফলে বিস্তৃত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। তবে ট্রাম্পের শক্ত অবস্থান রয়েছে—এমন এলাকায় এর প্রভাব না-ও পড়তে পারে।

আজকের এই বাণিজ্য সংঘাত এই সত্য প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে তার প্রভাবশালী অবস্থানটি হারিয়েছে। যখন দরিদ্র, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র চীন ২৫ বছর আগেই পশ্চিমাদের সঙ্গে তার বাণিজ্য বৃদ্ধি শুরু করেছিল, তখন অল্প কিছু মানুষই কল্পনা করতে পেরেছিল যে দেশটি একদিন বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর একটিতে পরিণত হবে। ক্রয়ক্ষমতা সমতার ক্ষেত্র পরিমাপ করা হলে চীন ইতিমধ্যেই উৎপাদন, সঞ্চয়, বাণিজ্য এবং এমনকি জিডিপিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করেছে।

প্রভাব
যুক্ত রাষ্ট্র চীনের ১৩০০ পণ্যে শুল্ক আরপ করে।
বানীজ্য যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কলেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটের ৭০০ পয়েন্ট পরেগেছে।
বাণিজ্যে যুদ্ধে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক উভয়ের ক্ষতি হয়। লাভ হয় শুধু সেইসব কোম্পানির যারা সংরক্ষণ ব্যবস্থার অধীনে আসে।
অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন এতে চীনের ক্ষতিই বেশি। কেননা চীনের ১/৫ অংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
এতে সমস্যা আরো বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, ফলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে মার্কিন নাগরিকদেরই।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল ২৩২ টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ শুল্ক দেয় বাংলাদেশ ১৫.২%

Add a Comment