বাণিজ্য চুক্তি

সাপটাঃ

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে সাউথ এশিয়ান প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট অর্থাৎ দক্ষিণ এশীয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (সাপটা) স্বাক্ষরিত হয়। এই সিদ্ধান্তটি গৃহিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়। সাপটার মূল উদ্দেশ্য ছিল সার্কভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে পারস্পারিক ব্যবসা বাণিজ্য উন্নয়নকল্পে পরস্পরকে অগ্রাধিকার সুবিধা প্রদান করা। এক সুযোগ সুবিধার মধ্যে ছিল সদস্যভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে পণ্য আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য শুল্ক রহিত বা হ্রাস করা।

সাফটাঃ

সাপটা চুক্তি সাক্ষরের ১১ বছর পরে ব্যাপক বাণিজ্য উদারীকরণ ও দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত হয় সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা দক্ষিণ এশিয়ান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি(সাফটা)। সাফটা চুক্তি কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে। এটি কার্যকরের পর সাপটা বাতিল হয়ে যায়। এই চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপকে স্বল্পোন্নত বা এলডিসিভুক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। আর ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে অপেক্ষাকৃত উন্নত অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী এই তিনটা দেশ তাদের শুল্ক হ্রাস করে ২০১৩ সালে শুল্ক শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে আসবে। আর বাকিদেশগুলিকে সময় দেওয়া হবে ২০১৬ পর্যন্ত।

টিপিপিঃ

যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১২টি দেশের সমন্বয়ে একটি বানিজ্য চুক্তি হচ্ছে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি। গত বছরের অক্টোম্বরে যুক্তরাজ্যের আটলান্টায় বহুল আলোচিত এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। অন্য দেশগুলি হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি মালয়শিয়া,মেক্সিকো, নিউজল্যান্ড,পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। এ চুক্তির ফলে দেশগুলি দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধা পাবে। ১২টি দেশ বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রন করে থাকে।

টিপিপি চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগঃ
এই ধরণের বিনা শুল্কের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের যথেষ্ঠ উদ্বেগ রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরাট বাণিজ্যের বাজার আর এই চুক্তিতে বাংলাদেশ নেই। ফলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই সুবিধা পাবে না কিন্তু বাংলাদেশের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কিছু দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম এই সুবিধা পেতে যাচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের যে চাহিদা রয়েছে তা অনেকটা ভিয়েতনামের কাছে চলে যেতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প প্রায় ১৬ শতাংশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। এছাড়া বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহ নিজস্ব মেধাসত্ব আইনের আওতায় উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু এই চুক্তির ফলে এই মেধাসত্ব চলে যাবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলির কাছ থেকে। এর ফলে মোটা অঙ্কের টাকা গুণতে হবে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের কৃষি খাত ও ওষুধ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

টিকফাঃ

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বহুল আলোচিত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম(টিকফা)। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটিনে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। আর ওই বছরের ১৭ জুন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা চুক্তিটি অনুমোদন করে। আমেরিকা ২০০২ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। তখন এর নাম ছিল টিফা। কিন্তু বিভিন্ন মতৈক্যের কারণে চুক্তিটি আর স্বাক্ষরিত হয় নি। তবে ২০১০ সালে চুক্তিটির নাম পরিবর্তন করে টিকফা নাম দিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বানিজ্য ও বিনিয়োগের ব্যাপারে মুক্ত ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

নাফটাঃ

নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এরিয়া(নাফটা) বা উত্তর আমেরিকান মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। নাফটার সদস্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা ও মেক্সিকো। এটি ১৯৯১ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এর সুবিধা হচ্ছে এর সদস্য দেশসমূহের মধ্যে পরস্পরের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত করা।

আপটাঃ

এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট(আপটা) ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রাচীনতন প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পারিক বানিজ্য উদারীকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সহাযোগিতা নিশ্চিত করা। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি হচ্ছে- বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, লাওস, শ্রীলঙ্কা ও মঙ্গোলিয়া।

সংগৃহীত

Add a Comment