পঞ্চশীল নীতি

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে উদ্ভাবিত এই পঞ্চশীল নীতিই হল জোট নিরপেক্ষ নীতির মূলকথা। ভারতের জওহরলাল নেহরু এবং চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই ছিলেন এই নীতির অন্যতম প্রবক্তা। ভারতের জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি পঞ্চশীলের উপর স্থাপিত।

পঞ্চশীল নীতি গুলো হল:
(ক) প্রতিটি স্বাধীন দেশের ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
(খ) দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিত্যাগ বা অনাক্রমণ নীতি গ্রহণ করা,
(গ) অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকা,
(ঘ) পারস্পরিক সাম্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং
(ঙ) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল সমস্যার সমাধান করা ।

.
এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি এবং ইউরোপীয় রাষ্ট্র যুগশ্লাভিয়াও নির্জোট আন্দোলনে সামিল হন । স্টালিনের সঙ্গে মতভেদের ফলে যুগশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো কমিউনিস্ট ব্লক থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিমা শক্তিগোষ্ঠীর সঙ্গে না গিয়ে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে পরিচালিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগদান করেন । তাঁর আমন্ত্রণে জওহরলাল নেহরু ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে যুগশ্লাভিয়া যান এবং ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মার্শাল টিটো ভারত সফরে আসেন । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ডিসেম্বর প্রচারিত এক যৌথ ঘোষণায় উভয় নেতা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতি নিজেদের গভীর আস্থার কথা বর্ণনা করেন । ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে ভারত-তিব্বত চুক্তির পর তিব্বত ভারতের পঞ্চশীল নীতি মেনে নিয়েছিল ।

১৯৫৪ সালের ২৯ এপ্রিল “শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি” এর জন্ম:
পরস্পরের ভূভাগ এবং সার্বভৌমত্ব সম্মান করা, পরস্পরকে আগ্রাসন না করা, পারস্পরিক অভ্যন্তরীণ ব্যাপারাদিতে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক উপকারিতা এবং শান্তিপূর্ণসহাবস্থান করা” এই পাঁচটি মৌলিক নীতি চল্লিশাধিক বছরের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য মৌলিক নীতিতে পরিণত হয়েছে।

১৯৫৪ সালের ২৯ এপ্রিল স্বাক্ষরিত “চীনের তিব্বতী অঞ্চল এবং ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য ও পরিবহন সংক্রান্ত চীন-ভারত চুক্তি”তে প্রথমে “শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি” আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপিত হয়েছে। ১৯৫৫ সালের এপ্রিলে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ আন লাই ইন্দোনেশিয়ার বান্দুংয়ে অনুষ্ঠিত ২৯টি দেশের অংশগ্রহনে এশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলন অর্থাত্ বান্দুং সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের চূড়ান্ত ইস্তাহারে উত্থাপিত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ১০টি মৌলিক নীতির মধ্যে পঞ্চশীল নীতির সমস্ত বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

চীন হচ্ছে “শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির” অন্যতম উদ্যোক্তা , এবং এর বিশ্বস্ত অনুসরণকারী। এটি চীনের পররাষ্ট্র ব্যাপারাদির মৌলিক নীতি হিসেবে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। চীন আর এক শতাধিক দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দলিলে এই পাঁচটি মৌলিক নীতি স্বীকার করা হয়েছে। বাস্তব অনুশীলন থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, “শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি” হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল নীতি।

Collected from Facebook Group বিসিএস ও অন্যান্য চাকুরীর প্রস্তুতি

Add a Comment