ইরানের পারমণবিক কর্মসূচি

জাতিসংঘের আণবিক শক্তি এজেন্সি জানিয়েছে ২০০৩ সালের পর থেকে ইরান তার পারমাণবিক বোমা নির্মাণ কর্মসূচি স্থগিত করেছে। মার্কিন গোয়েন্দারা ও জানিয়েছে, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক যুক্তি ইরান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। এ চুক্তির কারণেই সে আর বোমা বানানোর দিকে হাত বাড়ায়নি। এখন চুক্তি বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইরান আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করতে পারে।

২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচির পরিসর সীমিত করতে রাজি হয়েছিল। এর বিনিময়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর থেকে নিষেধাত্তা তুলে নেয়। ফলে ইরান বেশ দ্রুতই তেলের উৎপাদন দিনে এক মিলিয়ন ব্যারেল বাড়াতে সক্ষম হয়। এ চুক্তি বাতিল হলে বিশ্ব বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের ঘাটতি হবে। জ্বালিনির বাজার এমনিতেই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে।

এ চুক্তিটি বাতিলে তৎপর হয়েছে ট্রাম ও নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের চোখে এটি মুখ্যত সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার একটি কূটনৈতিক সাফল্য সে কারণে এটিকে যেভাবেই হোক বাতিল করতে হবে।
আর নেতানিয়াহুর কারণটি অবশ্য ভিন্ন। একাধিক দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি এই মুহূর্তে ভীষণ বেকায়দায় রয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থায় নেতানিয়াহু তাঁর বহু ব্যবহৃত ও প্রমানিত সামরিক আগ্রাসনের তাসটি ব্যবহার করতে চিছেন। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কথা তুলে তিনি এখন বলতে চাইছেন, এই সংকট থেকে ইসরাইলকে একমাত্র তিনিই বাঁচাতে পারেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরান চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও বাকি পাঁচ রাষ্ট্র তা বহালের পক্ষে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ও জার্মানি চুক্তিতে থাকা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। চীন, রাশিয়া ও চুক্তি রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছে।

এই চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের প্রধান আপত্তিগুলো হলো: মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অসদাচরণ বন্ধ ও দেশটির দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম ঠেকানোর বিষয় চুক্তিতে উল্লেখ নেই এবং ২০২৫ সালের পর ইরানের পরমাণু কার্যক্রম পুনরায় চালু করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞাও এই চুক্তিতে রাখা হয়নি। অর্থাৎ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০২৫ সালের পর ইরান চাইলে আবার পরমাণু কার্যক্রম চালাতে পারবে।

ইউরোপীয় নেতারা মধ্যপ্রাচ্যে যেসব লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া হয়েছেন সেগুলো হলো, এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইরান ও সৌদি আরবের রশি–টানাটানির মাত্রা কমিয়ে আনা; পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ, সন্ত্রাস দমন এবং ইউরোপে শরণার্থীদের স্রোত থামিয়ে দেওয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই লক্ষ্য অর্জনের পথকে দুর্গম করে দিয়েছে। ইয়েমেন, ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ায় চলমান লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং ইরানবিরোধী দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী এই অবস্থান ইউরোপের লক্ষ্য অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। ইইউ সদস্যদেশগুলোর অনেক কূটনীতিকের আশঙ্কা, ট্রাম্পকে শান্ত করতে গিয়ে তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রকারান্তরে মাথা নোয়াতে হবে।

Add a Comment