কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে ভুল ধারণা হলো, একদিন তা মানুষের মতো সৃজনশীল হয়ে উঠবে। তখন মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে যন্ত্র। তা অবশ্য হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। তবে মানুষ সব সময় এগিয়ে থাকবে একটি কাজে। সেটা কী, তা জানার আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাজের ধরন জেনে নেওয়া যাক।

কীভাবে কাজ করে এআই?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় কম্পিউটার বিজ্ঞানের ‘ফরওয়ার্ড’ মডেল হিসেবে। ইনপুট দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া এর কাজ। এই তথ্য সংখ্যা হতে পারে, লেখা হতে পারে, ছবি হতে পারে। গাণিতিকভাবে নির্ণয়যোগ্য যেকোনো কিছু হতে পারে। নতুন তথ্য পেলে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। ফলে যত বেশি সময় ধরে তথ্য পেতে থাকবে, তত বেশি চৌকস হয়ে উঠবে এআই। গৃহীত সিদ্ধান্ত তত বেশি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

নব্বইয়ের দশকের কম্পিউটিং মডেলগুলোও তো একই কাজ করত। তাহলে পার্থক্যটা কোথায়? এআই-পূর্ববর্তী এই কম্পিউটিং পদ্ধতি ‘ব্যাকওয়ার্ড’ মডেল নামে পরিচিত। ব্যাকওয়ার্ড মডেলে যে তথ্য ইনপুট দেওয়া হয়, অ্যালগরিদমে জুড়ে দেওয়া শর্তের ভিত্তিতে তা প্রক্রিয়াজাত শেষে ফলাফল দেয়। ডেটার পরিমাণ বাড়ালে নতুন ডেটার জন্য নতুন করে প্রক্রিয়াজাত করে, ফলাফলও নতুন হয়।

অন্যদিকে, এআইভিত্তিক ফরওয়ার্ড মডেলে নতুন করে ডেটা ইনপুট দিলে আগের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। আরও বেশি ডেটা দেওয়া হলে, হিসাবনিকাশ প্রথম থেকে শুরু করে না, আগে গ্রহণ করা সিদ্ধান্তে নতুন ডেটার প্রভাব খতিয়ে দেখে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যন্ত্রকে ‘প্রশিক্ষণ’ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য থাকতে হয়। প্রচুর তথ্য না থাকলে এআই ব্যবহারের যৌক্তিকতা থাকে না।

তাত্ত্বিক দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শুরু নব্বইয়ের দশকে। তবে বিকাশটা কিন্তু হয়েছে ইদানীং। কারণ দুটি। প্রথমত, আগে এত ডেটা নিয়ে কাজ করতে হতো না। দ্বিতীয়ত, আগে প্রচুর ডেটা একসঙ্গে প্রক্রিয়াকরণের জন্য পর্যাপ্ত গতির কম্পিউটার ছিল না।

এআই কী পারে, কী পারে না

এআই হলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম। দক্ষতার সঙ্গে দ্রুত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। অ্যালগরিদম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। তবে কখনো সৃজনশীল হতে পারে না। ব্যক্তি-স্থান-ধারণা সম্পর্কে নিজের সৃজনশীল মতামত জানাতে পারে না। এআই মানুষের আচরণ নকল করতে পারে। তবে কল্পনাশক্তি নেই। যন্ত্র একই কাজ একইভাবে দিনের পর দিন করে যেতে পারে। মানুষও পারে, তবে যন্ত্রের মতো দক্ষতার সঙ্গে নয়।

স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনশিল্পে দিন দিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক যন্ত্রের ব্যবহার বাড়তে থাকবে। পৌনঃপুনিক কাজের জন্য মানুষের শ্রমের চাহিদা কমতে থাকবে। তবে এখন মানুষ দরকার সৃজনশীলতার জন্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির তৈরির জন্য এবং মানুষের কাজে তা লাগানোর জন্য।

মানব মন একই সঙ্গে কল্পনাপ্রবণ ও সৃজনশীল। এই একটা জায়গায় যন্ত্র মানুষের জায়গা দখল করতে পারে না। মার্কিন চলচ্চিত্রনির্মাতা ওয়াল্ট ডিজনি যেমন বলেছিলেন, যা তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো, তা করতেও পারো। মানুষ পারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পারে না। এখানেই মানুষ অনন্য।

বিতর্ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার(Artificial Intelligence) ভবিষ্যৎ নিয়ে দুটি দল। একদল বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশীর্বাদ। আরেকদল মনে করেন এটি অভিশপ, মানব সভ্যতার জন্য হুমকি।

প্রয়াত জ্যোতির্পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, ‘মানব সভ্যতার ধ্বংসের জন্য পারমণবিক বোমার পরেই দায়ী থাকবে এআই’।

রকেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কও একই ধরনের সতর্কবার্তা জানিয়েছেন।

মাইক্রোসফট রিসার্চের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের প্রধান এরিক হরভিটজ এ বিষয়ে বলেন, আমরা নানা ধরনের গবেষণা করে যাচ্ছি এবং দেখা যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিতে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণও একসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বিষয়টি যে নাও ঘটতে পারে সেটিও উল্লেখ করে এরিক জানান, এমনই যে হবে এমনটাও নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি এআই পদ্ধতি গবেষণার ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

বর্তমানে চালকবিহীন গাড়িতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। যদি এ প্রযুক্তির সফল প্রচলন ঘটে তখন লাখ লাখ পেশাদার চালক বেকার হয়ে পড়বে।

কলকারখানাগুলোতে ক্রমবর্ধমানভাবে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটতে থাকলে অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়বে।

Add a Comment