BCS-Solution

বন্যা

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা অন্যতম। এ দেশের মানুষের কাছে বন্যা যেমন ভয়াবহ তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার উপর অপরিসীম প্রভাব ফেলে।

কোনো এলাকা প্লাবিত হলেই কি বন্যা হয়?
প্রকৃতপক্ষে এ দেশের প্রেক্ষিতে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়ে যদি মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতিসাধন হয় তাহলেই বন্যা হয়েছে ধরা হয়। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও বৃষ্টিবহুল দেশ। এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২,৩০০ মিলিমিটার৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীসহ ৭০০টি নদী এ দেশে জালের মতো বিস্তার করে আছে। এর মধ্যে ৫৪টি নদীর উৎসস্থল ভারতে অবস্থিত। এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যার যে ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে তা নিশ্চয় করে বলা যায়।

সাধারণত বন্যা কখন হয়?

বাংলাদেশে কেন বন্যা হয়? বন্যা হওয়ার কারণ দুধরনের প্রাকৃতিক কারণ ও কৃত্রিম কারণ।

প্রাকৃতিক কারণ
ভৌগোলিক অবস্থান।
মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব।
মূল নদীর গভীরতা কম।
শাখানদীগুলো পলি দ্বারা আবৃত।
হিমালয়ের বরফগলা পানি প্রবাহ।
বঙ্গোপসাগরের তীব্র জোয়ার-ভাটা।
ভূমিকম্প।
কৃত্রিম কারণ
নদী অববাহিকায় ব্যাপক বৃক্ষ কর্তন।
গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ।
অন্যান্য নদীতে নির্মিত বাঁধের প্রভাব।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ।

এছাড়াও উজান থেকে নেমে আসা নদীর পানির প্রচুরতার কারণে বন্যা হয় যেমন- ২০১২ এপ্রিল নেত্রকোনায় বন্যা হয়।

বন্যার প্রভাব

বাংলাদেশের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। বন্যায় এলাকা প্লাবিত হয়ে বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়। মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। পশুপাখির জীবন বিনষ্ট ও বিপন্ন হয়। ধ্বংস হয় সম্পদ। ২০০০ সালের বন্যায় দেশের ১৬টি জেলার ১.৮৪ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। উৎপাদন আকারে এ ক্ষতির পরিমাণ ৫.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০০১ সালে সংঘটিত বন্যায় দেশের ১৬টি জেলার ০.৪১ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়।

বন্যার ধরন

  1. মৌসুমি বন্যা
    • ঋতুভিত্তিক
    • বিস্তৃতি ব্যাপক
    • ক্ষতির পরিমাণ বেশি
    • পানি হ্রাস-বৃদ্ধির গতি ধীর
  2. জোয়ার-ভাটাজনিত বন্যা
    • স্বল্প স্থায়ী
    • সাধারণ উচ্চতা ৩ থেকে ৬ মিটার
    • অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় বন্যার রূপ ভয়াবহ
  3. আকস্মিক বন্যা
    • পানি হ্রাস-বৃদ্ধির দ্রুত গতি
    • পার্বত্য এলাকায় দেখা যায়

পৃথিবীর ব-দ্বীপ বাংলাদেশ তথা এ ঢালু সমভূমির দেশে বিভিন্ন শতাব্দীতে বন্যা হয়েছে। ১৯৫৪ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪ সালের বন্যা ছিল ভয়াবহ। এর মধ্যে ১৯৯৮ সালের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিপাতের যে রেকর্ড রয়েছে তা তুলনাহীন বলা যায়।

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও জলবায়ুর কারণেই বন্যা এ দেশের একটি চির পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তাই বলা যায় দুর্যোগ এবং বিপর্যয় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এ বিপর্যয়কে পরাভূত করা একান্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অতীতকাল থেকেই মানুষ বন্যা প্রতিকারের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে আসছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

ক. সাধারণ ব্যবস্থাপনা

(১) নদীর দু তীরে ঘন জঙ্গল সৃষ্টি করা।
(২) নদী-শাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা।
(৩) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন।
(৪) পুকুর, নালা, বিল প্রভৃতি খনন করা এবং সেচের পানি সংরক্ষণ করা।
(৫) প্রতি বছর বন্যা মোকাবেলার জন্য সরকারিভাবে স্থায়ী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা।

খ. শ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল প্রকৌশল ব্যবস্থাপনা

(১) ড্রেজারের মাধ্যমে নদীর পানির পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
(২) সন্নিহিত স্থানে জলাধার নির্মাণের মাধ্যমে পানি প্রবাহকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা।
(৩) ভারত থেকে আসা পানিকে বাঁধের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা।
(৪) সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
(৫) নদী তীরকে স্থায়ী সুদৃড় কাঠামোর সাহায্যে সংরক্ষণ করা।

গ. সহজ প্রকৌশলগত ব্যবস্থাপনা

(১) নদীর দু তীরে বেড়িবাঁধ দিয়ে নদীর পানি উপচেপড়া বন্ধ করা।
(২) দেশের সর্বত্র বনায়ন সৃষ্টি করা।
(৩) রাস্তাঘাট নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা।
(৪) বন্যা প্রবল অঞ্চলে সর্বোচ্চ বন্যা লেভেলের উপরে ‘আশ্রয়কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা।
(৫) শহর বেষ্টনীমূলক বাঁধ দেওয়া।

বন্যা এ দেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করে। তাই বলা যায় বন্যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে এবং কিছু প্রচেষ্টা পরিকল্পনাধীন আছে। বাংলাদেশের প্রধান ৩টি নদীর উৎস চীন, নেপাল, ভারত ও ভুটান। এ ৩টি নদীর মোট অববাহিকা এলাকার পরিমাণ ১৫,৫৪,০০০ বর্গকিলোমিটার, যার মাত্র ৭ শতাংশ এলাকা এ দেশে অবস্থিত। কিন্তু এসব নদী প্রবাহের ৮০ শতাংশেরও বেশি পানি বাইরে থেকে আসে এবং বন্যার জন্য দায়ী ৯০ শতাংশ পানিই এ ৩টি নদী নিয়ে আসে। তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও এর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার জন্য প্রয়োজন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা।

Paper Cliping

বন্যার ঝুঁকি মোকাবিলায় আপৎকালীন বিমা বাস্তবায়নে করণীয়

Exit mobile version