মূল্যবোধ

From MyAcademy
মূল্যবোধ হল মানুষের আচরণ পরিচালনাকারী নীতি ও মানদণ্ড। অন্যভাবে বলা যায়,মূল্যবোধ হল কতগুলো মনোভাবের সমন্বয়ে গঠিত অপেক্ষাকৃত স্থায়ী বিস্বাস। আর যে শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি , প্রথা, আদর্শ ইত্যাদির বিকাশ ঘটে তাই হল মুল্যবোধ শিক্ষা। মূল্যবোধ হল সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি। এটি মানুষের আচরণের সামাজিক মাপকাঠি। একটি দেশের সমাজ,রাষ্ট্র,অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উৎকর্ষতার অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে এটি ভূমিকা পালন করে।
ফ্রাঙ্কেল এর মতে,”মূল্যবোধ হল আবেগি ও আদর্শগত ঐক্যের ধারনা”।

মূল্যবোধের গুরুত্বঃ

মূল্যবোধ শিক্ষা ব্যক্তির মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। আর এভাবে ব্যক্তিসত্তার বিকাশ সাধন করে এটি সুশাসনের পথকে প্রশস্ত করে এবং সামাজিক অবক্ষয়ের অবসান ঘটায়। তাই মূল্যবোধ শিক্ষা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় সব ধরনের অবক্ষয় থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করতে পারে। মূল্যবোধের পরিবর্তনের ফলে বয়সের সাথে আদর্শিক ধর্মীয় বা পবিত্র বিষয়গুলো জাগ্রত হয়। তাই এটি ব্যক্তিজীবনের গাইডলাইন হিসেবে ভুমিকা পালন করে।

মূল্যবোধ গঠনের মাধ্যমঃ

নিম্নের বিষয়গুলো মূল্যবোধ গঠনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।এগুলো হল-
১.পরিবার
২.বিদ্যালয়
৩.সম্প্রদায়
৪.খেলার সাথি
৫.সমাজ ও
৬. প্রথা

অন্যদিকে,দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি বোধ,পারিবারিক ও সামাজিক ভুমিকার শৈথিল্য, ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর অধিক নির্ভরশীলতা প্রভৃতি মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নিয়ামক।

মূল্যবোধের প্রকারভেদঃ

স্থান,কাল ও জাতিভেদে মূল্যবোধের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আবার একই সমাজে বিভিন্ন প্রকার মূল্যবোধ পরিলক্ষিত হয়। যেমন-

১. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধঃ গণতন্ত্র থেকে উৎসারিত মূল্যবোধ হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। পরমত সহিষ্ণুতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অপরিহার্য। এটি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকা রাখে এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করে। তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জাতীয় উন্নতির চাবিকাঠি বলা হয়।সহনশীলতা,আনুগত্য প্রভৃতি হল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।

২.সামাজিক মূল্যবোধঃ যে চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্য মানুষের সামাজিক আচার ব্যাবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাই সামাজিক মূল্যবোধ। ন্যায়পরায়ণতা ,সততা ও শিষ্টাচার হল সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এটি মূল্যবোধ মানুষের আচরণ বিচারের মানদন্ড। স্টুয়ারট সি ডড এর এর মতে,”সামাজিক মূল্যবোধ হলো সেসব রীতিনীতির সমস্টি যা ব্যাক্তি সমাজের নিকট হতে আশা করে এবং যা সমাজ ব্যক্তির নিকট হতে লাভ করে।’ বড়দের সম্মান করা,আতিথেয়তা,সহনশীলতা, দানশীলতা প্রভৃতি হল সামাজিক মূল্যবোধ।সহনশীলতাকে সামাজিক মূল্যবোধের অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে গন্য করা হয়।

৩.বাহ্যিক মূল্যবোধঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সরলতা ও পোশাক পরিচ্ছেদ প্রভৃতি হল বাহ্যিক মূল্যবোধ।

৪.রাজনৈতিক মূল্যবোধঃ আনুগত্য,রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক শৃংখলাবোধ প্রভৃতি হল রাজনৈতিক মূল্যবোধ। ব্যক্তির রাজনৈতিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে জাতীয় মূল্যবোধ,জাতীয় শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গড়ে উঠে ।

৫.সাংস্কৃতিক মূল্যবোধঃ মানুষ তার ধারণকৃত সংস্কৃতি থেকে যে মূল্যবোধ গ্রহণ করে তাই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ।সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ব্যক্তির মুল্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

৬.ধর্মীয় মূল্যবোধঃ ধর্মীয় ঐতিহ্য,বিশ্বাস প্রভৃতি থেকে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠে তাই ধর্মীয় মূল্যবোধ।সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা,অন্যের ধর্ম পালনে বাধা না দেয়া,কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রেষ্ট না ভাবা প্রভৃতি হল ধর্মীয় মূল্যবোধ ।

৭.শারীরিক ও বিনোদনমূলক মূল্যবোধঃ এটি ব্যক্তি জীবনের জৈবিক ও মানসিক চাহিদা পরিতৃপ্তিতে সহায়তা করে।

৮.বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যবোধঃ
সত্যানুসন্ধ্যানের স্পৃহার সাথে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিপ্রসূত মানবীয় আচরণের আদর্শিক দিকই বৌদ্ধিক মূল্যবোধ।

৯.পেশাগত মূল্যবোধঃ পেশাগত মূল্যবোধ হল ব্যক্তির মুল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি ।

১০.নৈতিক মূল্যবোধঃ
ব্যক্তির উচিত-অনুচিত,ভাল-মন্দ,ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিচারের যে মূল্যবোধ তা হল নৈতিক মূল্যবোধ।যেমন-ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া,আর্তের সবা করা প্রভৃতি।

১১.ব্যক্তিগত মূল্যবোধঃ আধুনিক বিশ্ব সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ব্যক্তিগত মূল্যবোধের উপর।এটি ব্যক্তির স্বাধীনতাকে লালন করে।প্রতিটি শিশুই ব্যক্তিগত মূল্যবোধ নিয়ে জন্মায় এবং প্রথমত পরিবার থেকেই শিশু এই মূল্যবোধের শিক্ষা পায়।যেমন- সঞ্চয় করার প্রবনতা হল ব্যক্তিগত মূল্যবোধ।

জার্মান দার্শনিক ও সমাজ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড স্পেন্সার মূল্যবোধকে ৬ ভাগে বিভক্ত করেছেন।যথা-
তাত্ত্বিক মূল্যবোধ,অর্থনৈতিক মূল্যবোধ,সৌন্দর্যবোধ মূল্যবোধ,সামাজিক মূল্যবোধ,রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় মূল্যবোধ।

Add a Comment