মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়েছিলেন কিনা ?

ধানমন্ডি-৩২ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে গিয়েছিলেন কিনা ? কোথায় কী আছে ? এই নিয়ে গত তিন বিসিএসে প্রশ্ন করা হচ্ছে ! সময় নিয়ে দেখে আসুন !

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর নবনির্মিত সুদৃশ্য ভবনটির দ্বিতীয় তলায় উঠতেই চোখে পড়বে ছাদের সঙ্গে টাঙানো মাঝারি আকারের একটি যুদ্ধবিমান। নাম ‘হকার হান্টার’। আসন একটাই, চালকের। ভেতরে প্রস্তুত থাকত কামান, মিসাইল ও বোমা। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই হকার হান্টার যুদ্ধবিমানটি পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বেশ কিছু ঘাঁটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এটি। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত সেই নিদর্শন ঠাঁই পেয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।


সিঁড়ি বেয়ে ওপরের তলায় উঠতেই বিশাল করিডরে দেখা মিলল শিখা চির অম্লানের। চারপাশে পানি আর মাঝখানে শহীদের স্মৃতি নিয়ে জ্বলছে শিখা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়েছে এই শিখা চির অম্লান। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও ইতিহাস তুলে ধরতে অনন্য পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে জাদুঘরের গ্যালারিগুলো। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী নানা স্মারক। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ নানা ডকুমেন্ট। একই সঙ্গে রয়েছে নানা স্মারক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তুলে ধরার ব্যবস্থা। নিদর্শন, আলোকচিত্র, চিঠিপত্র, ভিডিও চিত্র, দলিল, স্মৃতিচিহ্নের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো। প্রাথমিকভাবে এখানে প্রায় ২৫ হাজার নিদর্শন রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় জানাতে জাদুঘরে রয়েছে ইন্টার-অ্যাকটিভ স্পেস ও ওপেন এয়ার থিয়েটার। এ ছাড়া রয়েছে তিনটি সেমিনার হল ও ২৫০ আসনের একটি অডিটরিয়াম। তাতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও অন্যান্য পারফর্মিং আর্ট প্রদর্শন করা হয়।


মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার জন্য রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভের স্থানও রাখা হয়েছে। প্রায় আড়াই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এই জাদুঘরে তিনটি বেইসমেন্ট ও পাঁচটি ফ্লোর রয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জের ম্যুরাল। রয়েছে বৃহৎ আকারের চারটি গ্যালারি। সেগুলোর আয়তন সব মিলিয়ে ২১ হাজার বর্গফুট। লিফটের তিনে উঠতেই এক নম্বর গ্যালারি। গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’। এখানে দেখা গেল প্রাচীন বঙ্গের মানচিত্র, পোড়ামাটির শিল্প, টেরাকোটা ও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। ছবিসহ নানা নিদর্শনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট। ধাপে ধাপে এই গ্যালারিতে উঠে এসেছে সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের সময় পর্যন্ত নানা স্মারক। দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়ল বঙ্গবন্ধুর বিশাল আকৃতির আলোকচিত্র। সেটি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের। পাশেই পর্দায় দেখানো হচ্ছে ভাষণটির ভিডিও চিত্র। তার সামনেই ছোট্ট কাচের বাক্সে রাখা ওই দিন সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও ভাষণের রেকর্ড। এরপর কালো টানেলের পুরোটা জুড়ে রয়েছে ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার নানা নিদর্শন।

আলোকচিত্রে, ভিডিও চিত্রে নানাভাবে উঠে এসেছে কালরাতের ভয়াবহতা। এরপর মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকার গঠনের নানা পর্বও তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ গ্যালারিতে—নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত নানা নিদর্শন দেখানো হয়েছে এখানে। একাত্তরের রণাঙ্গনে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা বিলোনিয়া যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে নিয়েছিলেন ভিন্নধর্মী রণকৌশল। বিলোনিয়া যুদ্ধের এই কৌশল ‘স্যান্ড মডেল’ নামে পরিচিত। বিলোনিয়া যুদ্ধের সেই রণকৌশল মডেল একটি কাচের টেবিলে সাজানো রয়েছে। এই গ্যালারির একটি বিশেষ অংশে তুলে ধরা হবে বাংলার নারীদের ওপর পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরতা আর নির্যাতনের চিত্র। প্রদর্শিত হয়েছে মিত্রবাহিনীর অংশগ্রহণ আর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নির্মমতার নানা আলোকচিত্র। জাদুঘরের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা। রবিবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য খোলা থাকে।

সংগৃহীত

Add a Comment