BCS-Solution

৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ

বাংলাদেশ সংবিধানের ৭০ ধারায় আপনি কী ধরনের সংস্কার প্রস্তাব করবেন? (৩৫তম বিসিএস লিখিত)

বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম ভাগ– আইনসভা এর প্রথম পরিচ্ছেদ সংসদ।

এ অংশের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু হল রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া। ধারাটি নিম্নরূপ

৭০। কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা
(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

নিম্নোক্ত কারণে এ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা দরকার

বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। হাই কোর্টে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট আবেদনের শুনানি হয়। ৭০ অনুচ্ছেদ কেন বাতিল ও সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী । আর কনিষ্ঠ বিচারপতি রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। দ্বিধাবিভক্ত আদেশের কারণে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নথি পাঠানো হবে প্রধান বিচারপতির কাছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অন্য কোনো বেঞ্চে পাঠাবেন।

যে যুক্তিতে রিট খারিজ করে দেওয়া হয়েছে
“জনগণ সকল ক্ষমতার অধিকারী। আর সংসদ সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধি। তাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আইন প্রণয়নে আদালত বাধ্য করতে পারে না। কার্যত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি-না তা দেখার জন্যই আদালতের সৃষ্টি। আদালতের দায়িত্ব সেটাই। বিচার বিভাগকে তার নিজস্ব সীমা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। সীমা অতিক্রম করতে পারে না। আইন প্রণেতারা কী উদ্দেশ্যে আইন করছেন তা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলতে পারেন না। আইন প্রণেতারা কী উদ্দেশ্যে আইন করছেন তা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুলতে পারে না। এজন্যই রিটটি খারিজ করা হল।” কনিষ্ঠ বিচারপতির আদেশে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত যে আদালত সংবিধান বা আইন প্রণয়ন করেন না। শুধুই বলতে পারেন সংসদে প্রণীত আইন সংবিধান পরিপন্থী কি না। এ কারণেই তো সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চম সংশোধনীত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল বলে রায় দিয়েছেন।

প্রস্তাবিত সংশোধন
তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ বিলোপ করা না হলেও এটির কিছু সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ভোটদানের ‘অপশন’ সংসদ সদস্যদের ইচ্ছাধীন করা যেতে পারে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে-


এসব বিষয়ে দলের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় অবস্থানের বিপক্ষে ভোট দিলে অথবা সংসদে উপস্থিত থেকে ভোটদানে বিরত থাকলে, অথবা সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত না থাকলে তিনি ওই দলের বিপক্ষে ভোটদান করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং সংসদে তার আসন শূন্য হবে। অন্য সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা ভোটদানে স্বাধীনতা ভোগ করবেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে এরূপ সংশোধনী আনা যেতে পারে। এতে সংসদীয় গণতন্ত্র স্থিতিশীল ও শক্তিশালী হবে।

ইতিহাস
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পূর্বসূরি হচ্ছে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ জারি করা রাষ্ট্রপতির ২৩ নম্বর আদেশ, যাতে বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্যদের সদস্যপদ বাতিলের কথা ছিল। সেখানে দুটি কারণে সদস্যপদ বাতিলের বিধান করা হয়, যদি কোনো সদস্য যে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তা থেকে ‘পদত্যাগ করেন’ অথবা বা ‘ওই দল থেকে বহিষ্কৃত’ হন। খসড়া সংবিধানেও একইভাবে তা অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু সংসদে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে সামান্য বদল করা হয়, সেখানে দল থেকে বহিষ্কার করার কারণে সদস্যপদ বাতিলের বিধান তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তার বদলে এর চেয়েও কঠিন ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়—যদি দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তবেই সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়।

এ বিষয়ে অনেকেই আপত্তি তোলেন এবং এই বিধানের বিষয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, ‘৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে এমন একটা অগণতান্ত্রিক বিধান রাখা হয়েছে, যা পৃথিবীর আর কোনো সংবিধানে নেই।
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে গৃহীত সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে ৭০ অনুচ্ছেদে আরও ব্যাখ্যা সংযোজন করা হয়। ব্যাখ্যায় বলা হয়, যদি কোনো সাংসদ, যে দল তাঁকে নির্বাচনে প্রার্থীরূপে মনোনীত করেছে, সে দলের নির্দেশ অমান্য করে—(ক) সংসদে উপস্থিত থেকে ভোটদানে বিরত থাকেন, অথবা (খ) সংসদের কোনো বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তিনি ওই দলের বিপক্ষে ভোট দান করেছেন বলে গণ্য হবেন।

১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে আগের অনুচ্ছেদগুলো ও এর ব্যাখ্যা অক্ষুণ্ন রেখে অনুচ্ছেদটিতে দফা (২) ও (৩) সংযোজন করা হয়। যাতে বলা হয়, ‘যদি কোনো সময় কোনো রাজনৈতিক দলের সংসদীয় দলের নেতৃত্ব সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সংসদে সে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্বের দাবিদার কোনো সদস্য কর্তৃক লিখিতভাবে অবহিত হওয়ার ৭ দিনের মধ্যে স্পিকার সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী ওই দলের সকল সংসদ সদস্যের সভা আহ্বান করে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের দ্বারা উক্ত দলের সংসদীয় নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন এবং সংসদে ভোটদানের ব্যাপারে অনুরূপ নির্ধারিত নেতৃত্বের নির্দেশ যদি কোনো সদস্য অমান্য করেন তাহলে তিনি (১) দফার অধীন উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেছেন বলে গণ্য হবে এবং সংসদে তাঁর আসন শূন্য হবে।’

এরপরের সংশোধনীটি হয় পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ১৯৭৫ ও ১৯৯১ সালে সংযোজিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে এই অনুচ্ছেদকে ১৯৭২ সালের সংবিধানের জায়গায় ফেরানো হয়েছে। ফলে আমরা ১৯৭২ সালের যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেখানেই প্রত্যাবর্তন করেছি।

Exit mobile version