সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স

বর্তমান বিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২। অর্থাৎ সাধারণ ক্ষেত্রে বয়স ৩০ বছর পার হলে আর কেউ সরকারি চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন না। তাঁকে দৌড়াতে হবে বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো উপায়ে রুটিরুজি জোগাড়ের দিকে।

এই তরুণেরা চান, বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩০–এর জায়গায় ৩৫ করা হোক। কারণ, সেশনজটের বেড়া ডিঙিয়ে তাঁদের স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করতেই বয়স ২৭ বা ২৮ হয়ে যায়। তাই চাকরিতে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে নিতেই বয়স ৩০-এর কাছাকাছি এসে পড়ে।

একটা সময় এ দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ছিল ২৭ বছর। পরে এটা বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। তার মানে কমানো-বাড়ানোর সুযোগ সব সময় আছে। এ দেশে সরকারি চাকরি পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া।

এই কারণেই আমাদের ছেলেরা, মেয়েরা আজ রাস্তায়। তাঁরা আন্দোলনে। এখন প্রশ্ন, তাঁদের এই ৩৫ করার দাবি কতটা যৌক্তিক? আমার কাছে একটি কাগজ আছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের অনেক দেশই এ ক্ষেত্রে উদার। যেমন আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখানে চাকরিভেদে সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৪ থেকে ৪০ বছর। আরেক প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায় তা আরও পাঁচ বছর বেশি।

যদি উন্নত বিশ্বের দিকে তাকাই, তারা আরও উদার। এ দেশে যে বয়স হলে সরকারি কর্মচারীদের ছাতা, লাঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় সে বয়সেও চাইলে চাকরিতে ঢোকা যায়।

এবার তাকাই ইউরোপে। ইতালি ও নরওয়েতে এ বয়স ৩৫। ফ্রান্সে ৪০, আর সুইডেনে ৪৭ বছর। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত দেশগুলো ৫৫ বছর পর্যন্ত তার নাগরিকদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে, বাইরের দেশগুলোতে যে নিয়ম আছে, আমাদেরও তাই করতে হবে? নিশ্চয়ই নয়। আবার অন্য দেশের উদাহরণ থেকে আমরা যে কিছু নেব না, এমন মনোভাবও যৌক্তিক মনে হয় না। শেখার কোনো বয়স নেই এ কথা যেমন সত্য, তেমনি তরুণ বয়সে যতটা শেখা যায়, পরবর্তী সময়ে আর তা হয় না, তাও সত্য।

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসছে প্রধানত সেশনজটের কারণে। একজন শিক্ষার্থী যদি ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারতেন, তাহলে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বেঠিক ছিল না। কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষ করতে আরও দুই–তিন বছর বেশি লাগছে। এর মধ্যে আবার রকমফের আছে। সম্ভবত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি ত্যাগ স্বীকার করছেন। তাঁদের মধ্যে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের যন্ত্রণাটা আরেকটু তীব্র। তাঁরা গড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কলেজের তুলনায় ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ছেন।

Add a Comment