মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ । সেদিন ছিল শনিবার। পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথ তলার এক আমবাগানে মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। সকাল ৯ টা থেকেই সেখানে নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমন শুরু হয়। দেশি বিদেশি প্রায় ৫০জন সাংবাদিক (আরেক বইয়ে আছে ১২৭জন) উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টায় শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এবং শুরুতেই বাংলাদেশকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ রূপে ঘোষণা করা হয়। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি একে একে প্রধানমন্ত্রী ও তার তিন সহকর্মীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে কর্নেল এম এ জি ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে কর্নেল আব্দুর রবের নাম ঘোষণা করেন। কর্নেল এম এ জি ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান সেনাপতি (৩৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এরপর সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। (২২তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এই ঘোষণাপত্র এর আগেও ১০ এপ্রিল প্রচার করা হয় এবং এর কার্যকারিতা ঘোষণা করা হয় ২৬ই মার্চ ১৯৭১ থেকে। ঐদিন থেকে ঐ স্থানের নাম দেয়া হয় মুজিবনগর। ঐ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বক্তব্য পেশ করেন।

এই মন্ত্রিপরিষদ এবং এমএনএ (Member of National Assembly ) ও এমপিএ (Member of Provincial Assembly) গণ ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী,ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী,খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়। ১১ এপ্রিল এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশ বেতারে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে ভাষণ প্রদান করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণাকে ভিত্তি করে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এ স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র তৈরি করেন। শপথ গ্রহণ শেষে নতুন সরকারকে ক্যাপ্টেন মাহবুব উদ্দিনের (এসডিপিও) নেতৃত্বে আনসার বাহিনীর একটি দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। যদিও গার্ড অব অনার প্রদান করার কথা ছিল ইপিআরের মেজর আবু ওসমান চৌধুরী। কিন্তু তিনি সময়মত সেখানে উপস্থিত হতে না পারেননি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণেই জিপ গাড়িতে উপস্থিত হলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও স্ত্রী নাজিয়া ওসমান। নাজিয়া ওসমান চৌধুরী মুজিবনগর সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।

Add a Comment