মন্ত্রীসভা

বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৬-৫৮ অনুচ্চেদে মন্ত্রিপরিষদের ক্ষমতা ও কার্যবলির বিশদ বর্ণনা আছে।

সরকার পরিচালনার জন্য দেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ আছে। প্রধানমন্ত্রী এর নেতা। তিনি যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রিগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিও মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন। তবে তার সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যার এক-দশমাংশের বেশি হবে না।

প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ একক ও যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থেকে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায়। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছে করলে মন্ত্রিসভার যেকোনো মন্ত্রীকে পরিবর্তন করতে পারেন। আবার যে কোনো মন্ত্রী ইচ্ছে করলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন।

মন্ত্রিপরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
মন্ত্রিপরিষদ দেশের শাসনসংক্রান্ত সব কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতার অধিকারী। দেশের শাসনব্যবস্থার চারদিকে রয়েছে এর নিয়ন্ত্রণ।

১. মন্ত্রিসভার সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মী হিসেবে দেশের সকল শাসনসংক্রান্ত ক্ষমতা ভোগ ও কার্য পরিচালনা করেন। মন্ত্রীগণ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ত্রিসভার ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে হয়।

২. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় দেশের শাসনসংক্রান্ত সকল বিষয় (যেমন আইন-শৃংখলা রক্ষা, অর্থনেতিক অগ্রগতি, বৈদেশিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, দ্রব্যমূল্য ও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি) আলোচিত হয় এবং এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

৩. মন্ত্রিপরিষদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় করে থাকে।

৪. আইন প্রণয়ন বা পুরাতন আইন সংশোধন এবং জাতীয় সংসদে নেতৃত্ব দেওয়া মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম প্রধান কাজ। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ নিজ নিজ বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন অনুযায়ী আইনের খসড়া তৈরি করে জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদনের জন্য বিল আকারে উপস্থাপন করেন এবং তা পাস করানোর জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।

৫. প্রতিবছর সরকার দেশ পরিচালনার জন্য বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করে। অর্থমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে খসড়া বাজেট প্রণীত হয়। মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন। খসড়া বাজেট সংসদে উপস্থাপন করে অনুমোদন করানো মন্ত্রিপরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

৬. দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষা মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠনের দায়িত্ব মন্ত্রিসভার। মূলত মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দেশরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে নিয়োগ দেন। দেশের
ভিতরে শান্তি-শৃংখলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও এর কাজ।

৭. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের। জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা ঠিক রেখে মন্ত্রিপরিষদ এসব কাজ করে।

৮. মন্ত্রিপরিষদ সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। সরকারের নীতি জনগণের কাছে তুলে ধরে এবং ঐসব নীতির পেছনে জনগণের সমর্থন আদায় করে।

Add a Comment