বঙ্গভঙ্গ

বিগত সালের BCS Preliminary- তে এখান থেকে প্রশ্ন এসেছে টি।

বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের (40তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) আদেশে ১ম বঙ্গভঙ্গ (২য় বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে)।

বঙ্গ প্রদেশের আয়তন ছিল ১,৮৯,০০০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা ছিল ৭৮.৫ মিলিয়ন। বঙ্গের পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিকভাবে এবং অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে পশ্চিমাঞ্চল হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। তাই সেখানে প্রশাসনি শিথিলতা পরিলক্ষিত হয়। যার ফলে মাঝে মধ্যেই সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি পরিলক্ষিত হত। তাই এই বৃহৎ বাংলাকে শাসনে সুবিধার্থে ছোট করার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠী। ফলশ্রুতিতে বড়লাট লর্ড কার্জন ৫জুলাই, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা দেন। এবং তা কার্যকর হয় ১৬ অক্টোবর, ১৯০৫ থেকে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে নতুন প্রদেশ গঠিত হয়। নবগঠিত এপ্রদেশের রাজধানী করা হয় ঢাকা। মি. বামফিল্ড ফুলারকে পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়।

  • বঙ্গভঙ্গের সময় বড়লাট ছিলেন- লর্ড কার্জন । (২৯, ২৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
  • বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ছিলেন- মি. ফ্রেজার।
  • নতুন প্রদেশের লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন মি. বামফিল্ড ফুলার। (৩৭, ১৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)
  • বঙ্গভঙ্গ রদের সুপারিশ করেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ।
    বঙ্গভঙ্গ রদের পর বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন লর্ড কারমাইকেল।

বঙ্গভঙ্গের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
১৯০৫ সালের রাজনৈতিক ধাক্কায় বিশেষভাবে পূর্ববঙ্গ জেগে উঠে। পূর্ব বঙ্গে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তারা এটাকে সাদরে গ্রহণ করে। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুরা ‘বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ হয়েছে বলে এর বিরোধীতা করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করে স্বদেশী গান লেখেন- “আমার সোনার বাংলা” ও “বাংলার মাটি বাংলার জল”। এছাড়াও তাঁর পরিকল্পনার রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়।

নতুন প্রদেশের রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে ওঠে। ফলে এ অঞ্চলের উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হয়। এ সময় মাধ্যমিক শিক্ষারও ব্যপক প্রসার ঘটে। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের প্রিতিক্রিয়ায় ১৯০৬ সালে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ মুসলিম লীগ গঠন করে।

বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা
মুসলিমরা বঙ্গভঙ্গ কে সাদরে গ্রহণ করলেও কলকাতার হিন্দুদের এটি একেবারেই পছন্দ হয়নি। তাই তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের ডাক দেন। এতে ব্রিটিশদের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। দেশীয় ও ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়ে দেন যে ভারতবর্ষে ব্যবসা চাইলে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে হবে। মূলত রাষ্ট্রের গোলযোগ দমন এবং ভারতবর্ষে বাণিজ্য চালু রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করে। ১২ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ দিল্লির দরবারে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন। তা কার্যকর হয় ২০ জানুয়ারি, ১৯১২। (৩৯, ২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) বঙ্গভঙ্গ রদের সুপারিশ করেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ।বঙ্গভঙ্গ রদের পর বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন লর্ড কারমাইকেল। ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে বঙ্গ আবার একত্রিত হয়। ভাষাতাত্ত্বিক এক নতুন বিভক্তির মাধ্যমে হিন্দি, ওড়িয়া এবং অসমীয়া অঞ্চলগুলো বঙ্গ হতে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আনা হয়। এরই সাথে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়া দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।

Add a Comment