প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকাশ

প্রাচীনকালে গ্রিসের নগর-রাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রচলিত ছিল। সেখানে সকল নাগরিক মিলে রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা করত। কিন্তু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের স্থলে পরোক্ষ গণতন্ত্রের প্রচলন হয়েছে। আজ গণতন্ত্রের অভিযাত্রা সকলের নিকট আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত জুটি এবং বাহ্যিক ও পরিবেশগত কারণে গণতন্ত্রের বিকাশ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারছে না। মাঝে মাঝে প্রতিকূল পরিবেশ গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলছে। যেমন- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইটালি, জার্মানি ও স্পেনে একনায়কতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে যা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে বাধার সৃষ্টি করে।
গণতন্ত্র বিকাশের ধারা সৃষ্টি এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকাশ নিশ্চিত করতে হলে গণতন্ত্রে সংকটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হল সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব। এই তিনটি মূলনীতিকে জাগ্রত করতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকাশের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যক।

(ক) গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হলে সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। শিক্ষা মানুষকে সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক হতে সচেতন করে। দেশের জনগোষ্ঠী শিক্ষিত ও সচেতন না হলে গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করতে পারবে না।

(খ) প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকাশের জন্য জনগণকে আগ্রহী ও উদ্যোগী হতে হবে। জনগণের সদাসতর্ক দৃষ্টি হবে গণতন্ত্রের দুর্গ। জনগণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ধরে রাখতে হবে এবং লালন করতে হবে।

(গ) গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সৃষ্টি করতে হবে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতা মোকাবেলার জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

(ঘ) গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্যের যেমন প্রয়োজন তেমনি অর্থনৈতিক সাম্যেরও প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সাম্য ছাড়া গণতন্ত্রকে আশা করা যায় না। ক্ষুধার্ত মানুষ কোনো সরকারকে পছন্দ করে না। অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধাগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় এমনভাবে সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন যাতে সকলেই সমান সুযোগ সুবিধা পায়। লাস্কি বলেন, “অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ছাড়া রাজনৈতিক গণতন্ত্র পাওয়া সম্ভব নয়।”

(ঙ) গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মতামত প্রকাশ ও গণসংযোগ রক্ষার মাধ্যমগুলোকে সকলের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে সেগুলোকে জনগণের নাগালের মধ্যে আনতে হবে, তবেই প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব হবে।

গণতন্ত্র জটিল প্রকৃতির শাসন ব্যবস্থা। এর কিছু ত্রুটি আছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য জনগণ যদি আগ্রহী হয় এবং গণতন্ত্রের মূল নীতিগুলোকে যদি সংরক্ষণ, লালন ও পালন করা যায় তাহলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের বিকাশ সম্ভব।


👉 Read More...👇

Add a Comment