ধর্মনিরপেক্ষতা

বাংলাদেশ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা সংক্রান্ত ১২ ধারাটি লিখুন। (৩৫তম বিসিএস লিখিত)

১২শ-ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন,

বিলোপ করা হইবে।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের শুরুই হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করে। দ্বিজাতিতত্ত্বটা ছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের ওপর নির্ভরশীল। বাঙালিরা সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে দেখে পাকিস্তানি হানাদারেরা ক্ষিপ্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত উন্মাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ঘা লেগেছিল তাদের স্বার্থে। তারস্বরে তারা ঘোষণা করেছিল, ইসলামকে রক্ষা করবে; ইসলাম রক্ষা আর পাকিস্তান রক্ষা তাদের কাছে একাকার হয়ে গিয়েছিল। হানাদারদের যারা পালের গোদা, সামরিক বাহিনীর মস্ত মস্ত বীরপুরুষ, তারা ধর্মকর্মের জন্য বিখ্যাত ছিল না। নিজেদের শৌর্যবীর্য তারা ধর্মাচরণের ভেতর দিয়ে প্রদর্শিত করেনি। পাকিস্তানি জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নামাজ পড়তেন বলে জানা যায় না; রোজার মাস কখন আসে কখনই বা বিদায় নেয়, তার খবর যে রাখতেন না এমন প্রমাণ আছে। অখণ্ড পাকিস্তান রাষ্ট্রের শেষ প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিশেষ খ্যাতি জঙ্গের ময়দানে যতটা না প্রকাশ পেয়েছে, ততোধিক ধরা পড়েছে মদ্যপানের আসরে। কিন্তু ওই রাষ্ট্রনায়কেরা কেউই রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করতে কার্পণ্য করেননি। ধর্মকে তাঁরা ব্যবহার করেছেন ধর্মের স্বার্থে নয়, নিজেদের স্বার্থেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সূত্রপাতই হয়েছিল ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে নাকচ করে দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ হানাদারদের চেয়ে বেশি ধার্মিক; কিন্তু ধর্ম ও রাষ্ট্রকে তারা কখনোই একাকার করে ফেলতে চায়নি। আলাদা করে রাখতে চেয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যে উৎসাহী হয়েছিল, সেটাও ধর্মের প্রয়োজনে নয়, ইহজাগতিক প্রয়োজনেই।

Add a Comment