স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান

স্বাধীনতার ঘোষণা: ২৬ মার্চ, ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল পাকিস্তানি শাসনের অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় নির্মমভাবে আক্রমণ চালায়, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এই গণহত্যার পর ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার ঘোষণার পটভূমি

  • অবিচার ও নির্যাতন: পাকিস্তানের শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন। আর্থিক, প্রশাসনিক, এবং সাংস্কৃতিক নিপীড়ন ক্রমেই বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে।
  • সাধারণ নির্বাচন ও সংকট: ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে। এই রাজনৈতিক সংকট এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণ বাঙালিদের স্বাধীনতার পথে ঠেলে দেয়।

শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা

  • ২৫ মার্চের রাতের আক্রমণ: পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসন থেকে মুক্তির ডাক দেন। ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত তাঁর বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, তবে তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
  • ঘোষণার বার্তা: বঙ্গবন্ধু রেডিও বার্তায় বলেন, “এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে তাদের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

মেজর জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার

  • চট্টগ্রামে প্রচার: ২৬ মার্চের সকালে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তিনি বলেন, “আমি মেজর জিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।”
  • বেতার বার্তা: চট্টগ্রাম থেকে প্রচারিত এই ঘোষণাটি দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করে।

স্বাধীনতার ঘোষণার প্রভাব

  • মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা: স্বাধীনতার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করে।
  • বিশ্বজুড়ে সমর্থন: স্বাধীনতার ঘোষণার পর সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানাতে শুরু করে। বিশ্বজনমতের সমর্থন বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।

উপসংহার

২৬ মার্চ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতির জন্য মুক্তির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই দিনটি স্বাধীনতার সংগ্রামের শুরুর দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ন’মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিজয় অর্জিত হয়, যা বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে চিরস্থায়ী করে তোলে। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে পালন করা হয়।

Add a Comment