রাজনৈতিক দল
|রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। সরকার যে রকমই হােক গণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এর প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয়।
ম্যাকাইভার রাজনৈতিক দলের একটি সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন। তাঁর মতে,
“যারা কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন করতে চেষ্টা করে, সেই জনসমষ্টিকে রাজনৈতিক দল বলা হয়।”
রাজনৈতিক দল হচ্ছে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর সেই অংশ যারা একটি আদর্শ বা কিছু নীতি বা কর্মসূচির ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে সংগঠিত হয়। রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় গিয়ে দলের নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা এবং নির্বাচনি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। রাজনৈতিক দল সকল ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকলের স্বার্থে কাজ করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আদর্শ ও কর্মসূচিভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি। বিশ্বে এমন দেশও আছে যেখানে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব নেই। যেমন- সৌদি আরব। সেখানে রাজপরিবার এবং এর পরিষদই সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। আবার কোথাও বা আইন করে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়, যেমন: ২০০৫ সাল পর্যন্ত আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল।
রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য
প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ :
১. রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান সমস্যা সনাক্ত করে আদর্শগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা।
২. দলীয় নীতি ও দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতি ও প্রগতি অর্জন করা।
৩. নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ও নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা দখল করা।
গণতন্ত্রের বিকাশে রাজনৈতিক দল
গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি। গণতন্ত্রের সফলতার জন্য রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা রাজনৈতিক দলই জনগণের মতামতকে সুসংগঠিত করে এবং জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটায়।রাজনৈতিক দল এর সদস্য ও নেতাদেরকে গণতান্ত্রিক আচার-আচরণে অভ্যস্ত হতে শেখায়। যেমন- দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় দলের নেতা ও কর্মীদেরকে সুযোগ দেওয়া হয় এবং অন্যের মতের প্রতি সহনশীল হতে শেখায়। জনগণের স্বার্থবিরোধী সরকারকে অপসারণ করে রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে।
১৯৯০ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জনস্বার্থবিরোধী সামরিক সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯১ সালে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের মাধ্যমে আবারও সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার গঠন করা হয়। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণা ছাড়া এ নির্বাচন সম্ভব নয়।