মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই যুদ্ধে শুধুমাত্র বাঙালিরা নয়, বরং বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সমর্থন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা তাদের সংগ্রামকে গতি ও শক্তি দেয়।

১. ভারত সরকারের ভূমিকা

  • সামরিক সহায়তা: ভারতের সরকার মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে। তারা ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবেশ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করে।
  • শরণার্থী গ্রহণ: বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ফলে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ভারতের দিকে চলে আসে। ভারত সরকার এদের সহায়তা প্রদান করে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

২. আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা

  • মানবাধিকার সংস্থা: Amnesty International এবং Human Rights Watch-এর মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সহায়ক হয়।
  • জাতিসংঘ: যদিও জাতিসংঘ সরাসরি সামরিকভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি, কিন্তু তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

৩. পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা

  • যুক্তরাষ্ট্র: মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন প্রদান করে, তবে দেশের মধ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ও আন্দোলন এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। অনেক মার্কিন নাগরিক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
  • যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের বাঙালি সম্প্রদায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণআন্দোলন শুরু করে এবং সরকারের কাছে পাকিস্তানের বর্বরতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে।

৪. অন্যান্য দেশের ভূমিকা

  • কানাডা: কানাডা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন প্রদান করে এবং মানবিক সহায়তা পাঠায়। তারা বাংলাদেশে যুদ্ধকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে।
  • অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার সরকারও পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশে শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান করে।

উপসংহার

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বহির্বিশ্বের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারত সরকার সামরিক এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করে প্রধান ভূমিকা পালন করে, পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং দেশের নাগরিক সমাজ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এই সমস্ত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমর্থন মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামে গতি ও শক্তি যোগায়, যা বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক হয়।

4o mini

Add a Comment