পার্বত্য জেলা পরিষদ

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। এছাড়া মূলধারার বাঙালিরাও সেখানে বসবাস করে। এসব অঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা, যা সমাধানে প্রয়োজন বিভিন্ন পদক্ষেপ। এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি জেলা আছে- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। (২৯তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) পার্বত্য জেলার তিনটিতেই একটি করে সংসদীয় আসন আছে। (৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এ তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি বিশেষ ধরনের জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রবর্তন করা হয়। পূর্বে পরিষদের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।

গঠন-কাঠামো ও প্রকৃতি
প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ ১ জন চেয়ারম্যান, ৩০ জন সাধারণ সদস্য এবং ৩ জন মহিলা সদস্যসহ সর্বমোট ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এদের সকলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের মধ্যে পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় পক্ষের প্রতিনিধি থাকবে। জনসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী কার সংখ্যা কত তা নির্ধারিত হবে। অপরদিকে, মহিলা আসন ব্যতীত পাহাড়িদের জন্য রিজার্ভ আসন বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মধ্যে বণ্টন হবে। ৩ জন মহিলা সদস্যের মধ্যে ২ জন হবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং ১ জন হবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাইরের বা বাঙালি। চেয়ারম্যান অবশ্যই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্য থেকে হবেন। সদস্যদের আসনসংখ্যা দু’সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হলেও ভোটদান হবে সকলের ভিত্তিতে। সংরক্ষিত রিজার্ভ আসন ছাড়াও অন্য আসনে মহিলারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। একজন সরকারি কর্মকর্তা পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদের কার্যকাল হবে ৫ বছর।

কার্যাবলি
পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলি নিম্নরূপ :
১. স্থানীয় পুলিশ ও জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংরক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও উন্নতি সাধন।
২. জেলার স্থানীয় কর্তৃপক্ষসমূহের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা দান।
৩. শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তার এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি।
৪. স্বাস্থ্যরক্ষা, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন।
৫. কৃষি ও বন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ।
৬. পশুপালন।
৭. মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন।
৮. সমবায় আন্দোলনে উৎসাহ প্রদান।
৯. স্থানীয় শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসার।
১০. অনাথ ও দুঃস্থদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড।
১১. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও এর বিকাশ সাধন। ক্রিড়া ও খেলাধুলার আয়োজন ও উন্নয়ন।
১২. যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি সাধন।
১৩. পানি সরবরাহ ও সেচব্যবস্থার উন্নয়ন।
১৪. ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা।
১৫. পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন।
১৬. স্থানীয় পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন।
১৭. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রীতিনীতি, প্রথার আলোকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরোধের বিচার ও মীমাংসা।

আয়ের উৎস
পরিষদের আয়ের উৎসের মধ্যে নিম্নে উল্লিখিত বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত-
ক. স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের উপর ধার্য করের অংশ।
খ. ভূমি ও দালান কোঠার উপর হোল্ডিং কর।
গ. রাস্তা, পুল ও ফেরির উপর টোল।
ঘ. যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি।
ঙ. পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের উপর কর।
চ. শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর হোল্ডিং কর।
ছ. সামাজিক বিচারের ফি।
জ. লটারির উপর কর।
ঝ. চিত্তবিনোদনমূলক কর্মের উপর কর।
ঞ. বনজ সম্পদের উপর রয়্যালটির অংশবিশেষ।
ট. খনিজ সম্পদ অন্বেষণ বা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র বা পাট্টা সূত্রে প্রাপ্ত রয়্যালটির অংশবিশেষ।
ঠ. সরকার কর্তৃক পরিষদকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আরোপিত কোনো কর ইত্যাদি।


👉 Read More...👇