পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচন
পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচন: প্রেক্ষাপট, ঘটনা এবং গুরুত্ব
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, বিশেষ করে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচনের একটি দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাস রয়েছে। এই সময়কালে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভাষার অধিকার, এবং স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বহু আন্দোলন সংঘটিত হয়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা পাকিস্তান আমলের রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচনগুলোর বিশ্লেষণ করব যা বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।
১. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
- বিভক্তি ও অসন্তোষ: ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষীদের অধিকাংশ জনগণ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিক্রিয়া ও দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ ছিলেন।
- ভাষা আন্দোলন: ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন রাজনৈতিক ঐক্য ও জাতীয়তাবোধের সূচনা করে।
২. রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন
- আওয়ামী মুসলিম লীগ: ১৯৪৯ সালে গঠিত, এই দলটি বাঙালির স্বার্থ রক্ষায় কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে এটি আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠে।
- ছাত্র সংগঠনগুলো: ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ছাত্রদের একতাবদ্ধতা রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
- কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল: পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান কংগ্রেসের মতো দলগুলো পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়ে গেলেও, তাদের জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমতে থাকে।
৩. নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন
- ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন: এই নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগ একটি বিশাল সাফল্য অর্জন করে এবং পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠন করে। এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তিশালী উদাহরণ।
- পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান (১৯৬২): পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান ১৯৬২ সালে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে এর ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
- ১৯৬৫ সালের নির্বাচন: এই নির্বাচনে আইয়ুব খান পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অসন্তোষ এবং প্রতিবাদ চলতে থাকে।
৪. রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্থান
- ‘ছয় দফা’ আন্দোলন: ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ‘ছয় দফা’ আন্দোলন শুরু হয়। এটি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায় এবং বাঙালি জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে।
- ৯০’র দশকের রাজনৈতিক পরিবর্তন: ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফলে ক্ষমতা পরিবর্তন ঘটে। এর পর আসলে ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারি করেন, এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
৫. নির্বাচনের ফলাফল ও স্বাধীনতার আন্দোলন
- ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন: এই নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। এই নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।
- ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। ২৫ মার্চ ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রভাব: এই নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগের বিজয় বাঙালি জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে।
- ‘ছয় দফা’ আন্দোলনের গুরুত্ব: এই আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে।
- ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল: আওয়ামী লীগের বিজয় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।
বিসিএস প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
১. পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ কী ছিল?
২. আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি কী ছিল?
৩. ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব আলোচনা করুন।
৪. ‘ছয় দফা’ আন্দোলনের মূল দাবিগুলো কী ছিল এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
৫. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল এবং তা মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে কীভাবে প্রভাব ফেলেছিল?
উপসংহার
পাকিস্তান আমলের রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ের আন্দোলন, নির্বাচন, এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলি বাঙালির জাতীয়তাবোধ এবং স্বাধিকার আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দেয়। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য পাকিস্তান আমলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর পরিণতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি মূল অংশ।
Related Posts
-
হাজি শরীয়ত উল্লাহ
No Comments | Dec 5, 2017
-
সংবিধানের ষষ্ঠ ভাগ- বিচারবিভাগ
No Comments | Dec 8, 2017
-
মাদক সমস্যা
No Comments | Jun 23, 2018
-
পাটশিল্পের সম্ভাবনা
No Comments | Jun 22, 2018