পরিবেশ ও উন্নয়ন
|বাংলাদেশের এনার্জি হাব
কক্সবাজারের নিকটবর্তী মহেশখালী, পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর এবং বাগেরহাটের মোংলা বন্দরসংলগ্ন অনেকগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি, কয়লা ও এলপিজি আমদানি অবকাঠামো নির্মাণের হচ্ছে। মহেশখালী দ্বীপ ও পটুয়াখালীর কলাপাড়াকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র বা ‘এনার্জি হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
কিন্তু বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের নদ-নদীগুলোর মধ্য দিয়ে অসংখ্য কয়লা, তেল ও এলএনজিবাহী নৌযানের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে সন্নিহিত এলাকার জীব ও জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে সীমিত রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা বাংলাদেশের ইলিশ মাছের প্রধান বিচরণকেন্দ্র। সমুদ্রের মাছ ইলিশ এই অঞ্চলের নদ-নদীতে খাবারের জোগান ও অনুকূল পরিবেশ পায় বলে জাটকা থেকে ইলিশ হওয়ার সময়কালে ব্যাপকভাবে বিচরণ করে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় কলাপাড়ায় ‘এনার্জি হাব’ গড়ে উঠলে তার বৈরী প্রভাব দূষণ সংবেদনশীল ইলিশসহ জলজ প্রাণীর ওপর ব্যাপকভাবে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
একই কথা প্রযোজ্য সুন্দরবন এলাকার ডলফিনের অভয়ারণ্য বহাল রেখে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রেও। সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পকারখানা স্থাপন উদ্যোগের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশগত সংবেদনশীলতার বিবেচনায় বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত এসব শিল্পকারখানার প্রভাব সুন্দরবনের পরিবেশে ও জীববৈচিত্র্যের জীবনাচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
করতোয়া নদীর উৎসমুখে জলকপাটঃ করতোয়া নদী রক্ষায় ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রকল্পের মধ্যে ১২২ কিমি. নদী পুনঃখনন ছাড়াও উৎসমুখ গাইবান্ধার খুলশিতে জলকপাট এবং শাজাহানপুরের মাদলা ও শেরপুরের ভাটিতে দুটি জলকপাট নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া করতোয়ার পানি যাতে ধরে রাখা যায়, এজন্য শিবগঞ্জের নাগর নদের মুখেও জলকপাট নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া বাঙালি নদীর ৯৯ কিমি. পুনঃখননে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ বাদীরা ভিন্ন মত পোষণ করছেন। তাঁরা মনে করছেন এতে করতোয়া তো বাঁচবেই না উল্টো নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসাবে পরিচিত বরগুনার ফাতরার বন বা টেংরাগিরি বন থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়েই হচ্ছে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে ২১ কিলিমিটার দীর্ঘ এ শ্বাসমূলীয় বনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।