পতাকা উত্তোলন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পতাকা উত্তোলন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাঙালিদের মধ্যে জাতীয় পতাকার গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুভূত হয়। এই সময়কালে পতাকা উত্তোলনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথে নতুন মাত্রা যোগ করে। নিচে পতাকা উত্তোলনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করা হলো:

১. পতাকার নকশা ও প্রথম উত্তোলন

  • প্রথম নকশা: ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেন। পতাকাটি সবুজ রঙের এবং এর মাঝে লাল বৃত্ত ছিল, যার মধ্যে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল খচিত।
  • প্রথম উত্তোলন: ২ মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো এই পতাকা উত্তোলন করা হয়। ছাত্রনেতা আসম আবদুর রব এই পতাকাটি উত্তোলন করেন। এটি ছিল স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং এই ঘটনার মাধ্যমে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আরো তীব্রতর হয়।

২. ৭ মার্চের পতাকা উত্তোলন

  • ঐতিহাসিক ভাষণ: ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের প্রস্তুত হতে বলেন।
  • পতাকার প্রদর্শন: এই দিনটি জাতীয় পতাকা বিভিন্ন স্থানে উত্তোলন করা হয় এবং তা বাঙালিদের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন করা হয়, যা বাঙালিদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।

৩. ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলন

  • পাকিস্তান দিবসে প্রতিবাদ: ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালে এই দিনে সারা বাংলাদেশে পাকিস্থানি পতাকা না তুলে পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
  • বিক্ষোভের মাধ্যমে উত্তোলন: ঢাকার বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে সরকারি ভবনগুলোতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটি ছিল পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের একটি প্রতিবাদ এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ।

৪. ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পতাকা উত্তোলন

  • স্বাধীনতার ঘোষণা: ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্থানি শাসকদের বিরুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন শুরু হয়।
  • বিভিন্ন শহরে পতাকা উত্তোলন: সারা দেশে এই সময় বাঙালিরা বিভিন্ন স্থানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক এবং স্বাধীনতার অঙ্গীকার।

উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পতাকা উত্তোলন ছিল বাঙালিদের জন্য মুক্তির চেতনার প্রতীক। এই পতাকা উত্তোলনের ঘটনাগুলো বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য একাত্মতার বহিঃপ্রকাশ। পতাকা উত্তোলন বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজও বাংলাদেশের পতাকা জাতীয় গর্ব ও স্বাধীনতার চেতনায় আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

Add a Comment