জুম চাষ
|জুম চাষ: বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি ও সংস্কৃতি
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কৃষি পদ্ধতি হিসেবে জুম চাষ বিশেষভাবে পরিচিত। দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় জুম চাষের প্রচলন রয়েছে। এটি মূলত ঢালু পাহাড়ি জমিতে চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
জুম চাষ কী?
জুম চাষ এক ধরনের শিফটিং বা স্ল্যাশ-অ্যান্ড-বার্ন চাষাবাদ পদ্ধতি, যেখানে একটি নির্দিষ্ট জমি এক মৌসুমে চাষের পর ছেড়ে দেওয়া হয়, এবং পরবর্তী কয়েক বছর পর সেখানে পুনরায় চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পাহাড়ি জমির গাছপালা কেটে ফেলা হয় এবং এরপর জমি পোড়ানো হয়। পোড়ানো জমিতে এঁটেল বা কালো মাটি তৈরি হয়, যা ফসল চাষের জন্য উপযুক্ত। জুম চাষের মাধ্যমে মূলত বিভিন্ন ধরণের ধান, শাকসবজি, কুমড়া, চিচিঙ্গা, গম এবং আদা উৎপন্ন হয়।
জুম চাষের প্রক্রিয়া
জুম চাষ সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
- বন পরিষ্কার: প্রথমে নির্দিষ্ট জমির গাছপালা কেটে পরিষ্কার করা হয়।
- জমি পোড়ানো: জমি পরিষ্কার করার পর গাছপালা পোড়ানো হয়, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- বীজ বপন: পোড়ানো জমিতে বীজ বপন করা হয়, যা সাধারণত হাতে করা হয়।
- ফসল তোলা: এক মৌসুম পরে ফসল সংগ্রহ করা হয়। এরপর জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে অন্য জমিতে চাষ করা হয়।
জুম চাষের উপকারীতা ও সীমাবদ্ধতা
উপকারীতা:
- মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি: জমি পোড়ানোর ফলে মাটিতে প্রাকৃতিক সার তৈরি হয়, যা ফসলের জন্য সহায়ক।
- স্বল্প সময়ে ফলন: জুম চাষে দ্রুত ফলন পাওয়া যায়।
- জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা: বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ করা হয়, যা জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সহায়ক।
সীমাবদ্ধতা:
- পরিবেশের ক্ষতি: জমি পোড়ানোর ফলে বন ধ্বংস হয় এবং মাটির উর্বরতা কমতে থাকে।
- স্বল্প উৎপাদন: জুম চাষে উৎপাদন সীমিত থাকে এবং এর ফলন সাধারণত কম হয়।
- জমি ক্ষয়: এই পদ্ধতিতে জমি ব্যবহারের ফলে ভূমিক্ষয় দেখা যায়।
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে জুম চাষের বর্তমান অবস্থা
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা প্রধানত জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। তবে বর্তমানে এই অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্থায়ী কৃষি ব্যবস্থা প্রচলিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জুম চাষের পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে এবং কৃষকদের উন্নয়নে স্থায়ী কৃষি পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
জুম চাষের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন এনজিও জুম চাষের পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে এবং কৃষকদের উন্নত চাষাবাদের পদ্ধতি শেখাতে কাজ করছে। এতে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং কৃষকদের বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।