চীনের ভূমিকা ও অবদান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের ভূমিকা ছিল পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনমূলক এবং কিছুটা নেতিবাচক। ১৯৭১ সালে চীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সরাসরি সমর্থন দেখায়নি। চীন তখন পাকিস্তানের সঙ্গে মৈত্রীপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল এবং পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মিত্র হিসেবে বিবেচনা করেছিল।

চীনের ভূমিকা ও অবদান

১. পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন:

চীন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের পাশে ছিল এবং তাদের সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন প্রদান করেছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে এবং এতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকে। তারা ইয়াহিয়া খানের সামরিক পদক্ষেপগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়।

২. জাতিসংঘে অবস্থান:

মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পথে অগ্রসর হয়, তখন জাতিসংঘে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে যায় এবং চীন এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায়। তারা মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও বাংলাদেশের ভূমিকা নিন্দা করে এবং এই দুই দেশের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বলে, যা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের অবস্থানকে শক্তিশালী করে।

৩. জাতিসংঘে ভেটো প্রদানের হুমকি:

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে, জাতিসংঘে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হলে, চীন স্পষ্ট করে জানায় যে তারা ভেটো প্রদান করবে। এর ফলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে স্বীকৃতি বিলম্বিত হয়। চীন এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের কূটনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিল।

৪. ভারতের প্রতি বিরোধিতা:

ভারতের প্রতি চীনের বৈরী মনোভাবও চীনের ভূমিকার পেছনে একটি বড় কারণ ছিল। ১৯৬২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ হয়েছিল এবং সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাই, চীন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণকে কৌশলগতভাবে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ হিসেবে দেখে এবং এর বিরোধিতা করে। চীন ভারতকে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করে এবং পাকিস্তানকে সমর্থন করে ভারতে প্রভাব বিস্তার কমানোর চেষ্টা করে।

৫. মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ভূমিকা:

স্বাধীনতার পরও চীন বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব করে। ১৯৭৪ সালের পর বাংলাদেশ যখন ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (OIC) সদস্যপদ লাভ করে, তখন চীন অবশেষে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা আরও বাড়ে।

চীনের ভূমিকার প্রভাব

চীনের পাকিস্তানপন্থী অবস্থান এবং জাতিসংঘে ভেটো প্রদানের হুমকি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, চীনের এই বিরোধিতার মধ্যেও বাংলাদেশ সফলভাবে স্বাধীনতা অর্জন করে। চীন পরবর্তীতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:

  • পাকিস্তানের প্রতি চীনের সমর্থন: কেন এবং কীভাবে চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।
  • জাতিসংঘে ভেটো প্রদানের হুমকি: চীনের ভেটো হুমকি এবং এর প্রভাব।
  • মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিরুদ্ধে চীনের বিরোধিতা: চীনের বিরোধিতার কারণ এবং এর কৌশলগত প্রভাব।
  • বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বিলম্ব: বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে চীনের বিলম্বের কারণ এবং পরবর্তী সম্পর্ক উন্নয়ন।

চীনের ভূমিকা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি বিশেষ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

Add a Comment