গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ
|গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ (শাসনকাল ১৩৮৯-১৪১০) ছিলেন ইলিয়াস শাহি রাজবংশের তৃতীয় সুলতান। তিনি তৎকালীন বাংলার সুপরিচিত সুলতানদের অন্যতম ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আজম শাহ। সিংহাসন আরোহনের পর তিনি গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ নাম ধারণ করেন।
বৈদেশিক সম্পর্ক
তিনি যুদ্ধর চেয়ে মিত্রতা ও কূটনীতির মাধ্যমে রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে বেশী আগ্রহী ছিলেন। শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি কামরূপের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অঞ্চল জয়ের চেয়ে শাসন সুসংহত করার প্রতি তার মনোনিবেশ বেশি ছিল।
জৌনপুরের খাজা জাহানের নিকট তিনি দূত ও উপহার প্রেরণ করেন। সমকালীন চৈনিক সম্রাট ইয়ং লির সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ১৪০৫, ১৪০৮ ও ১৪০৯ সালে তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন। ইয়ং লিও তার কাছে দূত ও উপহার পাঠান।
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মক্কা ও মদিনায়ও দূত প্রেরণ করেন। এই দুই স্থানে গিয়াসিয়া মাদ্রাসা নামক দুটি মাদ্রাসা নির্মাণে তিনি আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন। তার শাসনামলে জমিদার রাজা গণেশ নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।
সাহিত্যে আগ্রহ
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ পন্ডিত ও কবিদের সমাদর করতেন। পারস্যের কবি হাফিজের সাথে তার পত্রবিনিময় হত। বাঙালি মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর তার বিখ্যাত রচনা ইউসুফ জুলেখা এ সময়ে সম্পন্ন করেন। এসময় কৃত্তিবাসের রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করা হয়।
কবি হাফিজকে বাংলায় নিমন্ত্রন করার জবাবে তিনি সুলতানকে একটি গজল রচনা করে পাঠান।
“শক্কর শিকন শওন্দ হমাঃ তূতিয়ানে হিন্দ।
যী কন্দে ফারসী কেঃ ব-বঙ্গালাঃ মী রওদ॥
হাফিয যে শওকে মজ্লিসে সুলতানে গিয়াস্দীন।
গাফিল ম-শও কেঃ কারে তূ আয নালাঃ মী রওদ॥”
ভারতের তোতা হবে মিষ্টি-মুখো সকল-ই,
ফারসীর মিছরী যবে বাঙ্গালায় চলিছে।
হে হাফিয! গিয়াসুদ্দীন শাহের সভার বাসনা
ছেড়ো না, কাজ তোমারি কাঁদা-কাটায় চলিছে।
১৪১১ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে তার মাজার রয়েছে।