কূটনীতিকের আনুগত্য প্রকাশ

কূটনীতিকের আনুগত্য প্রকাশ: স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন এবং সমর্থন অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করা কূটনীতিকরা তাঁদের নৈতিক দায়িত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং এই পদক্ষেপ বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উৎসাহ ও সাহস যোগায়।

কূটনীতিকের আনুগত্য প্রকাশের প্রেক্ষাপট

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে কর্মরত অনেক বাঙালি কূটনীতিক তাদের নৈতিকতা ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যা এবং বাংলাদেশের নিরপরাধ জনগণের উপর অত্যাচারের খবরে কূটনীতিকরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হন। তাই তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি

১. কলকাতা কনস্যুলেটের ঘোষণা:

  • ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতায় পাকিস্তান কনস্যুলেটে কর্মরত অনেক কূটনীতিক তাঁদের আনুগত্য বাংলাদেশের প্রতি প্রকাশ করেন। তারা পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব ছেড়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করেন।
  • এটি ছিল পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

২. যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ:

  • পাকিস্তান এম্বেসির বেশ কিছু বাঙালি কর্মকর্তা, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে কর্মরত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানান।
  • তাঁরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষ নিয়ে কাজ শুরু করেন এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানাতে থাকেন।

কূটনীতিকদের ভূমিকা

কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশ বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহানুভূতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাঁরা বিভিন্ন দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং পাকিস্তানের জুলুম ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন। ফলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের খবর পৌঁছে যায় এবং জনমত তৈরি হয়।

কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশের প্রভাব

  • আন্তর্জাতিক জনমত: কূটনীতিকদের এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশকে সমর্থন জানাতে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর চাপ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়।
  • নিরাপত্তা ও নৈতিক সমর্থন: দেশের বাইরে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি নৈতিক সমর্থন ছিল এবং বাংলাদেশিদের আত্মপ্রত্যয় আরও সুদৃঢ় হয়।
  • বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: আনুগত্য প্রকাশকারী কূটনীতিকদের পদক্ষেপ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কূটনীতিকদের আনুগত্য প্রকাশ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তাঁদের এই পদক্ষেপ বাঙালির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়িয়ে দেয় এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। মুক্তিযুদ্ধে কূটনীতিকদের এই সাহসী ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

Add a Comment