ইংরেজ শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

ইংরেজ শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ইংরেজ শাসন ভারতীয় উপমহাদেশে (১৭৫৭-১৯৪৭) দীর্ঘ ১৯০ বছরের জন্য স্থায়ী হয়েছিল এবং এই সময়কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। নিচে ইংরেজ শাসনামলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো:

১. ব্রিটিশ শাসনের সূচনা

  • প্লাসি যুদ্ধ (১৭৫৭): ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে বেঙ্গল রাজ্যে প্রথম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
  • বক্সার যুদ্ধ (১৭৬৪): এই যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বাংলার পরবর্তী শাসক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে এবং ভারতের আরো অঞ্চল দখল করতে শুরু করে।

২. শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন

  • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন (১৭৫৭-১৮৫৮): কোম্পানি প্রথমে ভারত শাসন করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, পরে তারা রাজনৈতিক শাসন গ্রহণ করে।
  • ব্রিটিশ রাজ (১৮৫৮-১৯৪৭): সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারত শাসন শুরু করে, যা ব্রিটিশ রাজের সূচনা করে।

৩. অর্থনৈতিক পরিবর্তন

  • কৃষি ও শিল্পের শোষণ: ব্রিটিশ শাসন কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেয় এবং শিল্পের বিকাশকে দমন করে। এটি কৃষকদের দারিদ্র্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • পণ্য উৎপাদনের পরিবর্তন: ভারতীয় কৃষকরা খাদ্যশস্যের পরিবর্তে অভিজাত পণ্য যেমন তুলা, চিনি, এবং মোমবাতি উৎপাদনে জোর দেওয়া শুরু করে।

৪. রাজনৈতিক পরিবর্তন

  • বিভিন্ন আইন ও সংস্কার: ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন আইন প্রবর্তন করে, যেমন ইনডিয়ান কাউন্সিল অ্যাক্ট (১৮৯২) এবং মরলে রিফর্ম (১৯০৯)।
  • ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা (১৮৮৫): স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়।

৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন

  • শিক্ষার প্রসার: ব্রিটিশ সরকার ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, যার ফলে নতুন শিক্ষিত শ্রেণীর উন্মেষ ঘটে।
  • সামাজিক সংস্কার: বিভিন্ন সামাজিক সংস্কার আন্দোলন গড়ে ওঠে, যেমন নারী শিক্ষা, শুদ্ধীকরণ আন্দোলন, এবং দাসপ্রথা বিলোপ।

৬. বিদ্রোহ ও আন্দোলন

  • সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭): এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বৃহৎ সংগঠিত বিদ্রোহ, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তি তৈরি করে।
  • ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন: ২০ শতকের প্রথমার্ধে গান্ধীজির নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে ওঠে, যেমন অহিংস আন্দোলন, সত্যাগ্রহ এবং সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স।

৭. ভারত ভাগ ও স্বাধীনতা

  • ভারত ভাগ (১৯৪৭): ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত হয়।
  • স্বাধীনতা (১৯৪৭): ১৫ আগস্ট ১৯৪৭-এ ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসানের সমাপ্তি ঘটে।

উপসংহার

ইংরেজ শাসন ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের চিত্রকে পরিবর্তিত করেছে। এই শাসনামল কেবল একটি শাসক গোষ্ঠীর আধিপত্য নয়, বরং এটি স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নতুন ভিত্তি তৈরি করেছে, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে সহায়ক হয়েছে।

Add a Comment