আবদুল মতিন
|আব্দুল মতিন ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে ৩ ডিসেম্বর, ১৯২৬ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান। জন্মের পর তাঁর ডাক নাম ছিল গেদু। আব্দুল মতিন ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা সৈনিক। তাঁকে ভাষা মতিন ও বলা হয়। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পান।
কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবন
১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় আব্দুল মতিনের অবদান অন্যতম। সেবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই কলাভবনের জনসভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। তাঁরই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন আব্দুল মতিন। মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠিত) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ গঠিত হয় এবং আবদুল মতিন নবগঠিত বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাথে ঐক্যবদ্ধ হন।
আবদুল মতিনের প্রকাশিত গ্রন্থের ভেতরে রয়েছে
- ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে: ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ শৈলজানা, পাবনা
- গণ চীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও দায়িত্ব প্রথা: ১৯৮৫
- ভাষা ও একুশের আন্দোলন, ঢাকা ১৯৮৬
- ভাষা আন্দোলন কি এবং তাতে কি ছিল, নন্দন প্রকাশন, ঢাকা ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯
- ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য: আব্দুল মতিন ও আহমদ রফিক, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ঢাকা ১৯৯১
- বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন, বুক পয়েন্ট ও সমাজ চেতনা পাবলিকেশন, ১৯৯৫
- জীবন পথের বাঁকে বাঁকে; সাহিত্যিকা, ঢাকা ২০০৪।
আব্দুল মতিন ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান করেন।