অসহযোগ আন্দোলন

অসহযোগ আন্দোলন: ইতিহাস, উদ্দেশ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ সালে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই আন্দোলন সংঘটিত হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রহণযোগ্য নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা অসহযোগ আন্দোলনের ইতিহাস, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।


১. অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি

  • পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি: ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য এবং শোষণের শিকার হচ্ছিল। পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি নিরাসক্ত ছিল, যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করছিল।
  • শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব: ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলে। এর পর থেকে বাঙালি জনগণের মধ্যে আন্দোলনের একটি নতুন ঢেউ শুরু হয়।

২. অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা

  • ১৯৬৯ সালের ঘটনা: ১৯৬৯ সালের মার্চে পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের উপর নিপীড়ন চালানো শুরু করে। পরিস্থিতির অবনতির কারণে, পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
  • অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য: আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান সরকারের অগণতান্ত্রিক নীতি এবং বৈষম্যমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা। জনগণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অদৃশ্যভাবে অসহযোগ প্রদর্শনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।

৩. আন্দোলনের কার্যক্রম

  • মাধ্যম: আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। বাঙালিরা সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখে।
  • নন-কোঅপারেশন: আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার এবং সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
  • বিক্ষোভ এবং গণ-আন্দোলন: আন্দোলনের সময় বিভিন্ন বিক্ষোভ এবং সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জনগণ তাঁদের দাবির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য রাস্তায় নেমে আসে।

৪. অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল

  • পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া: আন্দোলনের তীব্রতার সাথে পাকিস্তান সরকার বিভিন্ন উপায়ে আন্দোলন দমন করতে চেষ্টা করে। তবে আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ জনগণ আন্দোলনে আরও জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করে।
  • নেতৃত্বের পরিবর্তন: আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
  • স্বাধীনতার পথে অগ্রসর: অসহযোগ আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে এটি বাঙালির মধ্যে স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার চেতনা গড়ে তোলে।

বিসিএস পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • অসহযোগ আন্দোলনের সময়কাল: ১৯৬৯ সালের মার্চ থেকে শুরু হয়ে এই আন্দোলন পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়।
  • অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব: শেখ মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগ, এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • ছয় দফার প্রভাব: অসহযোগ আন্দোলন ‘ছয় দফা’ দাবি বাস্তবায়নের একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিসিএস প্রস্তুতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

১. অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি এবং লক্ষ্য কী ছিল?

২. এই আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং প্রধান সংগঠনগুলো সম্পর্কে আলোচনা করুন।

৩. অসহযোগ আন্দোলনের সময়কাল এবং এর কার্যক্রম কী কী ছিল?

৪. পাকিস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং আন্দোলনের ফলাফল কীভাবে প্রভাব ফেলেছিল?

৫. অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কীভাবে অবদান রেখেছিল?

উপসংহার

অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি বাঙালির স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব, প্রেক্ষাপট, এবং এর প্রভাব সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি, কারণ এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি মৌলিক অংশ।

Add a Comment