BCS-Solution

মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্য

তিনি মোট পাঁচটি কাব্য রচনা করেন-

  1. তিলোত্তমা সম্ভব
  2. মেধনাদবধ
  3. ব্রজাঙ্গনা কাব্য
  4. বীরাঙ্গনা কাব্য
  5. চতুর্দশপদী কবিতাবলী

তিলোত্তমা সম্ভব(১৮৬০)– তাঁর প্রথম বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এর কাহিনী মহাভারত থেকে নেওয়া- হিরণ্যকশিপুর বংশজাত নিকুম্ভের দুই পুত্র। সুন্দ উপসুন্দ – দুজনেই দুজনের প্রতি খুব অনুরক্ত ছিলেন এবং একসঙ্গে সব কাজ করতেন। তপস্যা করে ওঁরা ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলেন যে, ত্রিলোকের কেউ ওঁদের ধংস করতে পারবেন না,যদি ওঁদের মৃত্যু হয়,তাহলে নিজেদের হাতেই হবে। এর কিছুদিন পর সুন্দ-উপসুন্দ ত্রিলোক বিজয় করতে বেরিয়ে সবাইকে পরাজিত করতে শুরু করলেন। দেবতারা স্বর্গত্যাগ করে ব্রহ্মলোকে পালিয়ে গেলেন। ব্রহ্মা তখন বিশ্বকর্মাকে আদেশ করলেন, এমন একটি প্রমদাকে(মনোহারিণী নারী) সৃষ্টি করতে যাকে সকলেই কামনা করে। তখন জগৎ থেকে সর্ব প্রকারের উত্তম উপাদান তিল প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্বকর্মা তিলোত্তমাকে গড়লেন। ব্রহ্মার আদেশে তিলোত্তমা যখন দেবতাদের প্রদক্ষিণ করে সুন্দ-উপসুন্দকে প্রলুব্ধ করতে যাচ্ছেন, তখন তাঁকে ভালো করে দেখতে গিয়ে ইন্দ্রের সহস্র লোচন হল, ব্রহ্মা চতুর্মুখ হলেন আর শিব স্থানু হয়ে গেলেন। তিলোত্তমা যখন মনোহর বেশে সুন্দ-উপসুন্দের কাছে গেলেন, তখন দুজনেই তাঁকে ভার্যা করতে চাইলেন। শেষে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে দুজনেই হত হলেন।
এ কাব্যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত, মানবিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন সুন্দ-উপসুন্দ কে বড় করে তুলেছেন এবং দেবতাদের ক্ষমতাকে খর্ব করেছেন।

মেধনাদবধ(১৮৬১) (৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) বাংলা সাহিতে প্রথম সার্থক মহাকাব্য ‘মেঘনাদ বধ’ মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ও- অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটি। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন : রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমুখ। এটি একটি সাহিত্যিক মহাকাব্য। রামায়ন মহাকাব্যে রাম চন্দ্র নায়ক হলেও- মেঘনাদ বধ কাব্যে রাবণ নায়ক।

যদিও তিনি মেঘনাদ বধ কাব্যের প্রথমে বলেছিলেন –

গাইব মা বীররসে ভাসি মহাগীত

তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে।

ব্রজাঙ্গনা কাব্য(১৮৬১) মধুসূদন স্বয়ং এর কাব্যগুলোকে Ode আখ্যা দিয়াছেন । এটি রাধা বিরহ বিষয়ক কাব্য। মধুসূদন দত্ত এতে বৈষ্ণব সাহিত্যের মত ভক্তি বা রস তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটাননি। (মিসেস) রাধার বিরহ ব্যথার আকুল মনোবেদনা ব্যক্ত করেছেন। পাঁচটি কাব্যের মধ্যে শুধু এ কাব্যেই তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেননি। অর্থাৎ মিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন।

বীরাঙ্গনা কাব্য(১৮৬২) বাংলা সাহিত্যে পত্রাকার কাব্যরচনা প্রথম দেখা যায় বীরাঙ্গনা কাব্যে। (31, 12তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এ কাব্য মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দের সর্বোত্তম নিদর্শন। ১৮৬২ সালে এই গ্রন্থ রচিত ও প্রকাশিত হয়। দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা, সোমের প্রতি তারা, দ্বারকনাথের(কৃষ্ণ) প্রতি রুক্মিণী, দশরথের প্রতি কৈকয়ী, লক্ষ্মণের প্রতি সূপর্ণখা, অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী, দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী, জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা, শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী, পুরুবার প্রতি উর্বশী, নীলধ্বজের প্রতি জনা— এই ১১টি পত্ররূপী কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থটি রচিত। মধুসূদন তাঁর কাব্যে এই নারীদের পুরাণ-পরিচিতির মূলে আঘাত করেছেন। তিনি মানবিক অনুভূতির আলোকে নারী-হৃদয়ের কথকতায় ব্যক্ত করিয়েছেন। তিনি এ কাব্যটি ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে উৎসর্গ করেছিলেন।

চতুর্দশপদী কবিতাবলী(১৮৬৬) (21তম বিসিএস প্রিলিমিনারি) এতে প্রায় ১০২ টি সনেট রয়েছে। তাঁর সনেটে দেশ প্রেমের প্রবল প্রকাশ ঘটেছে। (১৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি)

Exit mobile version