পদ্মা নদীর মাঝি

গ্রন্থঃ পদ্মা নদীর মাঝি।
রচয়িতাঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রধান চরিত্রঃ কুবের, কপিলা, হোসেন মিয়া।

১৯৩৬ সালে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১৯৩৪ সাল থেকে “পূর্বাশা” পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। পদ্মা নদীর মাঝি ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বাধিক পঠিত, আলোচিত এবং অতি জনপ্রিয় একটি উপন্যাস। এ উপন্যাসটি অনেকগুলো ভাষায় অনূদিত হওয়ার গৌরবও অর্জন করেছে।

পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে পদ্মার তীর সংলগ্ন কেতুপুর গ্রাম এবং তার আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মাঝি ও জেলেদের বাস্তব জীবনালেখ্যই যেন অঙ্কিত হয়েছে। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসে হতদরিদ্র পদ্মার মাঝিদের জীবন সংগ্রামই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লেখনি দিয়ে। তাদের প্রতিটি দিন কাটে দীনহীন অসহায় আর ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে। দু বেলা দু মুঠো খেয়ে- পরে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের জীবনের পরম আরাধ্য। এটুকু পেলেই তারা সুখী। পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কুবের। কুবের পদ্মা নদীর অসহায় দরিদ্র্য মাঝি, প্রতিনিয়তই অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হয়। মূলত কুবের কে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ধরে বাকি চরিত্রগুলোর চিত্রণ সম্পন্ন করেছেন ঔপন্যাসিক। উপন্যাসের নায়িকা কপিলা,যদিও কুবের বিবাহিত এবং তার স্ত্রীও জীবিত এবং তাদের সন্তান-সন্ততিও আছে! তবে কুবেরের স্ত্রী মালা জন্ম থেকেই পঙ্গু। উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হোসেন মিয়া। সে পদ্মার তীর সংলগ্ন মাঝিপ্রধান গ্রামগুলোর অসহায় মাঝিদের মাজে প্রায় সেবকরূপেই আবির্ভূত। তবে আপাতদৃষ্টিতে তাকে সবার সেবক মনে হলেও এই সেবা কর্মের পেছনে রয়েছে তার এক গভীর দুরভিসন্ধি। সে বহুদূরে একটি দ্বীপের পত্তন নিয়েছে। সে দ্বীপ নির্জন শ্বাপদসংকুল। অথচ সেই নির্জন দ্বীপেই সে একের পর এক পাঠাতো পদ্মা নদীর অসহায় মাঝিদের, তাদের মুখোমুখি হতে হত অস্তিত্ব রক্ষার কঠিন সংগ্রামের। এভাবেই চলে অসহায় দ্বীনহীন পদ্মানদীর মাঝির জীবন। চিরটাকাল তারা কাটিয়ে দেয় এক অজ্ঞানতার ধোঁয়াশার ভেতরে, এক গোলকধাঁধাঁয় তাদের জীবন বন্দী। এ গোলকধাঁধাঁ থেকে বের হবার রাস্তা তাদের হয়তো জানা নেই কিংবা কেউ সাহস করে তা থেকে বের হতেও চায়না। এভাবেই কাটে পদ্মানদীর মাঝির প্রতিটা দিন-রাত আর কেটে যায় সারাটা জীবন। সেই জীবনের গল্পই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে উপন্যাসটির পাতায় পাতায়।

পদ্মা তীরবর্তী জেলে পরিবার গুলোর জীবন কাহিনী এর মূল উপজীব্য বিষয়। সম্ভবত এটি প্রথম বাংলা উপন্যাস যেখানে আদ্যন্ত কথোপকথনে প্রকৃতি মানুষের হাতে নির্যাতিত একটি গোষ্ঠি জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুখ, ভালবাসা, অসহায়তা ও আত্মরক্ষার তীব্র জৈবিক ইচ্ছার কাহিনি, গরীব মানুষের বেঁচে থাকার আগ্রহ ও সংগ্রমের সাহস, সেই সঙ্গে হোসেন মিঞা নামক এক রহস্যময় ব্যাক্তিত্বের উপস্থিতি উপন্যাসটিকে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব দান করেছে।

কুবের কপিলার আন্তঃসম্পর্ক উপন্যাসটির ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে। তাদের দুজনের ভালবাসা ছাড়াও মান অভিমান গুলো পাঠক হৃদয় ছুয়ে যায়। ‘আমারে নিবা মাঝি লগে’ এরকম আরো অনেক কথা পাঠক হৃদয়কে হর-হামেশা পুলকিত করে। পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি আবহমান বাংলার চিরন্তন প্রেক্ষাগৃহ। আমাদের সমাজ সামাজিকতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ ও প্রকৃতির কঠোরতার মধ্যে জেলে পরিবার গুলো কেন বাঁচতে চায়, কীভাবে বাঁচে, সমাজপতিরা কেন এবং কীভাবে শোষণ করে এবং সমাজপতিদের মনোভাব কেমন হয়। গরীব মানুষের অসহায়তাকে তারা কীভাবে কাজে লাগায়। আবার এই জেলে পল্লীর মানুষ গুলোর ভাব-ভালবাসা ও মন্দ লাগার ব্যাপার গুলো কেমন হয় তার পরিপূর্ন বর্ণনা আছে এই উপন্যাসের মধ্যে। সব মিলিয়ে এ উপন্যাস একটি সার্থক উপন্যাস।

মাত্র ৪৮ বছরের (১৯০৮-৫৬) স্বল্পায়ু জীবন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জীবনের এই অল্প সময়ের মধ্যে সাহিত্যের এক বিশাল শাখায় বিচরণ করেন। শিল্পী জীবনের পরিধি আরো কম মাত্র ২৮বৎছর। তারই ভিতরে ৩৭টি উপন্যাস, সোয়া দুইশর উপরে ছোটগল্প নিশ্চয়ই কোন গোপন প্রজ্ঞা ও চৈতন্যের অগ্ন্যুৎপাত ধরে রাখে। এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে, নামের লোভে শখের লেখক তিনি নন।

From: Facebook SS_Education News May 16, 2015 ·

  • কুবের, কপিলা, শশী, কুসুম চরিত্রসমূহ কোন উপন্যাসের অন্তর্গত? উপন্যাস দুটির রচয়িতা কে? (৩৮তম বিসিএস লিখিত)

Add a Comment