BCS-Solution

ইয়ং বেঙ্গল

ইয়ং বেঙ্গল হল হিন্দু কলেজের ছাত্রদেরকে সমসাময়িক কলকাতা সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত সামাজিক বুদ্ধিবাদী একটি অভিধা বিশেষ। এঁরা সবাই হিন্দু কলেজ এর মুক্তবুদ্ধি যুক্তিবাদী শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র অনুসারী ছিলেন। হিন্দু কলেজে ডিরোজিও-র কর্মকাল ছিল ১৮২৬ সাল থেকে ১৮৩১ সাল। ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদেরকে জ্ঞানানুরাগী হতে এবং যে কোনো অন্ধবিশ্বাস পরিত্যাগ করতে দীক্ষা দিয়েছিলেন ডিরোজিও। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত ছিল ইতিহাস আর দর্শন। তাঁর পুনরাবৃত্ত উপদেশ ছিল ‘সত্যের জন্য বাঁচা, সত্যের জন্য মরা’।

ডিরোজিও-র প্রিয় ছিলেন হিন্দু কলেজের একদল বুদ্ধিদীপ্ত ছাত্র। এঁদের মধ্যে
কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
রসিককৃষ্ণ মল্লিক
দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়
রামগোপাল ঘোষ
মাধবচন্দ্র মল্লিক
রামতনু লাহিড়ী
মহেশচন্দ্র ঘোষ
শিবচন্দ্র দেব
হরচন্দ্র ঘোষ
রাধানাথ শিকদার
গোবিন্দচন্দ্র বসাক
অমৃতলাল মিত্র

এঁরা সবাই ছিলেন মুক্তচিন্তা দ্বারা উজ্জীবিত। হিন্দু সমাজের বিদ্যমান সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামো এঁদেরকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু প্রথা তথা ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক শৃঙ্খলমুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রয়াস হিসেবে ইয়ং বেঙ্গল-এর সদস্যগণ গো-মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানে আনন্দবোধ করতেন। হিন্দুদের কুসংস্কার আর কতিপয় নিষ্ঠুর সামাজিক ও ধর্মীয় আচারের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান মিশনারিগণ যে সকল যুক্তি ব্যবহার করতেন, ইয়ং বেঙ্গল-এর অনেক সদস্য সেসব যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করতেন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এঁদের অনেকই হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন।

অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন

১৮২৮ সালে ডিরোজিও ও তাঁর ছাত্রেরা ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন। এ অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান করত। অ্যাসোসিয়েশনের সভায় প্রচুর জনসমাগম হতো। মাঝেমধ্যে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট গুণীজনও উপস্থিত হতেন। ডিরোজিও-র ছাত্রেরা ভলতেয়ার, হিউম, লক, টমাস পেইন প্রমুখের রচনাবলি গভীর অভিনিবেশে অধ্যয়ন করতেন এবং বিতর্ককালে এঁদের রচনা প্রায়শ উদ্ধৃত করতেন।

সোসাইটি ফর দি অ্যাকুইজিশন অব জেনারেল নলেজ

১৮৩৮ সালে এঁদেরই স্থাপিত আরেকটি সংগঠনের নাম ‘সোসাইটি ফর দি অ্যাকুইজিশন অব জেনারেল নলেজ’। তারাচাঁদ চক্রবর্তী ছিলেন এ সোসাইটি-র সভাপতি এবং প্যারীচাঁদ মিত্র ও রামতনু লাহিড়ী ছিলেন এর সম্পাদক।

ডিরোজিও ও তাঁর শিষ্যেরা ১৮২৮ এবং ১৮৪৩ সালের মধ্যে বেশ কিছু সাময়িকী প্রকাশ করেন। এসব পত্র-পত্রিকার মধ্যে ছিল পার্থেনন, হেস্‌পারাস, জ্ঞানাম্বেষণ, এনকোয়েরার, হিন্দু পাইওনিয়ার, কুইল এবং বেঙ্গল স্পেক্টেটর।

Exit mobile version