নাথ গীতিকা

প্রথমেই নাথ সম্প্রদায়ের পরিচয়।
মহান রুদ্রের (শিব) ঔরসে সূর্যবতীর গর্ভে যোগনাথ জম্মগ্রহণ করেছিলেন। এই যোগনাথ হতে নাথ বংশের বিস্তার হয়েছে। বেদশাস্ত্র এবং পুরাণাদীতে মহাদেবকে মহান এবং মহারুদ্র রুপে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই নাথ সম্প্রদায় রুদ্রজ ব্রাম্মণ, যোগ সাধনাই নাথ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্ম বলে তাঁরা “যোগী”। নাথ সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবতা শিব, তাই তাঁরা শৈব এবং শিব গোত্রীয়। আমরা বর্তমানে যাদের ‘নাথ’ বা ‘দেবনাথ’ পদবি দেখতে পাই, তাঁরা সকলেই নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত। নাথ ধর্মের প্রবর্তন করেন যোগী মীননাথ। তিনিই ছিলেন নাথ ধর্মের প্রথম গুরু। তিনি আদতে বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বরিশাল জেলার লোক ছিলেন। তবে তাঁর নাম অনেক রূপে লিখিত হয়েছে: মৎস্যেন্দ্রনাথ, মচ্ছেন্দ্রনাথ ইত্যাদি। তাঁর ধর্মের নামও অনেক: নাথপন্থা, নাথধর্ম, সহজিয়া ইত্যাদি। মীননাথের জন্মস্থান চন্দ্রদ্বীপ এবং জীবনের অনেকটা সময় চন্দ্রদ্বীপেই তিনি অতিবাহিত করেছেন। এ মর্মে রায় পাওয়া যায় ‘কৌলজ্ঞান নির্ণয়’ গ্রন্থে এবং জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ওয়াকিল আহমদ এর বিশ্লেষণে।

নাথ গীতিকা – নাথ সাহিত্য বা শাক্ত পদাবলী নামেও পরিচিত। নাথ সম্প্রদায়বিষয়ক রচনার দুটি প্রধান ভাগ: একটি হলো নাথগুরুদের অলৌকিক সাধন-ভজনের কাহিনী। এ বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে গোরক্ষবিজয়, মীনচেতন প্রভৃতি। গোরক্ষবিজয় রচনা করেছেন শেখ ফয়জুল্লাহ। শ্যামদাস সেন রচনা করেন মীনচেতন।

এবং অন্যটি রাণী ময়নামতির পুত্র গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস অবলম্বনের কাহিনী। ইতিহাসে কোন এক বিস্মৃত সময়ে গোপীচাঁদ বা গোবিন্দচন্দ্র যৌবনে তার মায়ের নির্দেশে দুই নব পরিণিতা স্ত্রীকে রেখে সন্যাস অবলম্বন করেন। এ কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে মানিকচন্দ্র রাজার গান, গোবিন্দচন্দ্রের গীত, ময়নামতীর গান, গোপীচাঁদের সন্ন্যাস, গোপীচাঁদের পাঁচালি প্রভৃতি। জর্জ গ্রিয়ারসন ১৮৭৮ সালে রংপুর জেলার কৃষকদের কাছে এসকল গীতিকা সংগ্রহ করে ‘মানিক রাজার গান’ নামে প্রকাশ করেন। নাথগীতিকাগুলি প্রধানত উত্তরবঙ্গে প্রচার লাভ করেছিল।

Add a Comment