BCS-Solution

চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব

Dombipa

Dombipa

চর্যাপদের ধর্মমত সম্পর্কে ধারণা দিন। (২৯তম বিসিএস লিখিত)

সিদ্ধাচার্যগণ অসামান্য কবিত্বশক্তির অধিকারী হলেও তাঁরা মূলত ছিলেন সাধক। বৌদ্ধ সহজযানী চিন্তা, দর্শন ও সাধনপদ্ধতিই তাই চর্যাপদের উপজীব্য হয়ে ওঠে। এই সহজযানী দর্শন একান্তই ভাববাদী। সিদ্ধাচার্যগণ সহজমার্গের পথিক ছিলেন। শুষ্ক তত্ত্বকথা নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন না। সেজন্য প্রথাগত সংস্কারের ধারও তাঁরা ধরতেন না।

মায়াপ্রপঞ্চ(প্রবঞ্চনা ) ও দ্বৈতবোধের(সরল প্রবৃত্তি বা নিজ ও কুপ্রবৃত্তি) ঊর্ধ্বে স্থিত যে ‘বোধিচিত্ত’, সকল প্রকার দ্বৈতবোধ পরিহার করে সাধনযোগে অবধূতিকামার্গের (যেখানে বোধশক্তি ও প্রাজ্ঞের দ্বারা উপলব্ধি করা যায়) পথে সেই ‘বোধিচিত্ত’কে ‘মহাসুখকমল’-এ স্থিত করাই সিদ্ধাচার্যদের সাধনার লক্ষ্য ছিল। এই ‘মহাসুখ’ সহজযান মতে একটি বিশেষ তত্ত্ব। সাধক ‘মহাসুখ’ লাভ করলে মায়াময় পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞানরহিত হন। এখানে হিন্দুদর্শনের সমাধিতত্ত্বের সঙ্গে ‘মহাসুখ’ দর্শনের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

চর্যাকারগণ গুরুবাদকে স্বীকার করেছেন। কুক্কুরীপাদের মতে, এক কোটি লোকের মধ্যে একজন চর্যার গূহ্যার্থ অনুধাবনে সক্ষম। সেক্ষেত্রে গুরুভিন্ন গতি নেই। বাস্তবিকই চর্যার কথা লৌকিক অর্থের বদলে সংকেতে আবৃত হওয়ায় তা সর্বসাধারণের বুদ্ধিতে ঠিক ধরে না।

এই দ্বৈতার্থের কয়েকটি নিদর্শন হলো: নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস অর্থে ‘চন্দ্র’, চিত্ত অর্থে ‘হরিণ’, জ্ঞানমুদ্রা অর্থে ‘হরিণী’, মহাসুখ অর্থে ‘নৌকা’, শবরী অর্থে ‘দেবী নৈরাত্মা’ ইত্যাদি।

তাঁদের রচনাশৈলী শিল্পসৌকর্যের অভিমুখী। তাঁদের বাকরীতি সংক্ষিপ্ত, অথচ নিগূঢ় অর্থবাহী। কোনো কোনো পদের এ অর্থগূঢ় বাক্যে সাধনমার্গে পৌঁছাবার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যেমন ডোম্বীপার ১৪নং পদ:

‘বাহতু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা।
সদ্গুরু পাঅ পসাএ জাইব পুণু জিনউরা’

অর্থাৎ, ডোমনি নদী পারাপার করছে, আর তারই মাধ্যমে সহজ সাধনার তীর্থধামে পৌঁছানোর আভাস সূচিত হচ্ছে।


👉 Read More...👇
Exit mobile version