কুম্ভকর্ণের ঘুম
|কুম্ভকর্ণের ঘুম অর্থ: অস্বাভাবিক ঘুমকাতুরে
কুম্ভকর্ণ ছিল এক রাক্ষস। সে কিন্তু যেন-তেন রাক্ষস ছিল না; রীতিমতো রাক্ষসরাজ রাবণের ভাই সে। আর ও খেতেও পারত খুব। জন্মানোর পরপরই ও হাজার খানেক প্রজা খেয়ে ফেলেছিল! পরে অবশ্য ও ওর ভাইদের সঙ্গে গোকর্ণ আশ্রমে তপস্যায় বসল। উগ্র তপস্যায় ব্রহ্মাকে সন্তুষ্টও করল। তারপর বর চাইল- অমরত্ব। কিন্তু ব্রহ্মা ওকে বর না দিয়েই চলে আসলেন। দেবতারাও ব্রহ্মাকে গিয়ে বললেন, কুম্ভকর্ণকে বর দিয়ে কাজ নেই। এমনিতেই ও যা খায়! ততদিনে কুম্ভকর্ণ প্রচুর রাক্ষস-প্রজা আর মানুষ তো বটেই, আরও খেয়ে ফেলেছে স্বর্গের সাতজন অপ্সরী, ইন্দ্রের দশজন অনুচর আর অসংখ্য মুনি-ঋষি। বর পেয়ে অমর হয়ে গেলে তো ও ত্রিভুবন খেয়ে ফেলবে! এদিকে কুম্ভকর্ণ আবার কঠোর তপস্যায় বসে গেছে। সে তপস্যা এমন কঠোর, পুরো পৃথিবী ভীষণ গরম হয়ে উঠল। এই যেন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, এমন অবস্থা! ব্রহ্মা তো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলেন। শেষে ব্রহ্মা এক ফন্দি আঁটলেন। তার স্ত্রী সরস্বতীকে বললেন, কুম্ভকর্ণের কণ্ঠে গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকতে।
ব্রহ্মা যখন কুম্ভকর্ণের কাছে বর জানতে চাইবেন, তখন কুম্ভকর্ণের বদলে সরস্বতী-ই বর চাইবেন। তেমনি-ই হল। ব্রহ্মা বর শুনতে চাইলে কুম্ভকর্ণ বলল, ‘অনন্ত জীবন’। আর সরস্বতী কণ্ঠে ঘাপটি মেরে থেকে সেটাকে বদলে বানিয়ে দিলেন, ‘অনন্ত নিদ্রা’। ‘তথাস্তু’ বলে ব্রহ্মাও নিশ্চিন্তে বর দিয়ে দিলেন। কুম্ভকর্ণের চৈতন্য আসার পর ওর তো মাথায় হাত! পরে ব্রহ্মার কাছে গিয়ে সে কী অনুনয়-বিনয়। শেষে ব্রহ্মা বর একটু পাল্টে দিলেন- ছয় মাস পরপর একদিনের জন্য কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙবে। অসময়ে ঘুম ভাঙলে অবশ্য কুম্ভকর্ণের মৃত্যুও হতে পারে। এই গল্প থেকেই ‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’ বাগধারাটির উৎপত্তি।
By: Nazmul Hasan