দুই কোরিয়ার একত্রীকরণ সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

তারেক শামসুর রহমান স্যারের লেখা থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ


২০০৭ সালের অক্টোবরে দুই কোরিয়ার মধ্যে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোহ মু হিউম ২ অক্টোবর উত্তর কোরিয়া যান এবং সেখানকার প্রেসিডেন্ট ও আজকের উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের (প্রয়াত) সঙ্গে বৈঠক করেন। এটা ছিল দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে দ্বিতীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০০ সালের ১২ জুন। দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কিম দাই জং মিলিত হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং ইলের সঙ্গে। এখন ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল কিম জং ইলের ছেলে কিম জং উন মিলিত হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে। এটা তৃতীয় শীর্ষ বৈঠক।

সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতিতে দুটি দেশের কথা বলা যায়, যেখানে দেশ দুইটি একত্রিত হয়েছে। ইয়েমেন ও জার্মানির একত্রীকরণ আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত। ইয়েমেন ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেন। ১৯৭৮ সালে দেশ দুইটি একত্রিত হয়। যদিও ‘আরব বসন্ত’ পরবর্তী সময়ে সেখানে একধরনের গৃহযুদ্ধ লক্ষ করা গেছে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ভাগ হয়ে গিয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি। পূর্ব জার্মানি ছিল সমাজতান্ত্রিক, আর পশ্চিম জার্মানি ছিল পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। ৯ নভেম্বর (১৯৮৯) বার্লিন দেয়ালের পতনের মধ্য দিয়ে দুই জার্মানির একত্রীকরণের পথ সুগম হয়েছিল। আর একত্রীকরণ সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৯০ সালে।

তা হলে এখন বাকি রইল কোরিয়া। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? দুই কোরিয়ার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কোরিয়া একটি বিভক্ত সমাজ। দুই কোরিয়ায় দুই ধরনের সমাজব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৬ সালের অক্টোবরে উত্তর কোরিয়া কর্তৃক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর থেকেই দেশটি আলোচনায় আছে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর এই অঞ্চলে একধরনের নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়। এর পর থেকেই আলোচনা শুরু হয়, কীভাবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণুমুক্ত করা সম্ভব। দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘ঐক্য’ কী করে সম্ভব? দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘শত্রু’ হিসেবেই এতদিন গ্রহণ করেছে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। সেই মানসিকতা পরিত্যাগ করা কি সম্ভব? যৌথ শিক্ষা কার্যক্রমইবা কীভাবে পরিচালিত হবে?

উত্তর কোরিয়ায় কোনো দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল নেই। সেখানে কি দ্বিতীয় রাজনৈতিক দল গড়তে দেওয়া হবে? দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারে। একধরনের কনফেডারেশন?

ইয়েমেনে একত্রীকরণ সেখানে গৃহযুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। জার্মানি একত্রীকরণে সাবেক পূর্ব জার্মানির প্রদেশগুলো খুব লাভবান হয়নি; বরং সেখানে একত্রীকরণের ২৮ বছর পার হওয়ার পরও দারিদ্র্য আছে।

সংলাপ যদি সফল হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদনকারীদের জন্য তা হবে দুঃসংবাদ। ইতোমধ্যে তাদের কোম্পানির শেয়ার মার্কেটে দরপতন হয়েছে।

Add a Comment